-পাষ্টর আবদুল মাবুদ চৌধুরী
যীশু কি ঈশ্বরের পুত্র?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তরের পূর্বে কোরআন ও বাইবেলে যে তিন ধরনের পুত্রের কথা বলা হয়েছে তা আমরা দেখব।
১.দৈহিক সম্পর্কের পুত্র :
যোহন ৩ : ৬ মানুষ থেকে যা জন্মে তা মানুষ
১৯ নং সুরা মরিয়ম ১৯ আয়াত - এক পবিত্র পুত্র দান করবার জন্য..
ইব্রাণী ৪ : ১৫ তিনি গুনাহের পরীক্ষার সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু গুনাহ করেন নি
১১২ সুরা ইখ্লাস ১-৩ - তিনি কাকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নাই।
“ঈশ্বরের পুত্র” এই বাক্যাংশটি শারিরীক ভাবে মসীহ ও খোদার সাথে সম্পর্ক বুঝানো হয় নি। মসীহের শারিরীক দেহ নিশ্চয়ই খোদার দেহ নয়।
২. প্রতীকী পুত্র :
“পুত্র” শব্দটি অধিকার অর্থে ব্যবহার হরা যায়। যেমন
২ নং বাকারা ১৭৭ ও ২১৫ আয়াত - “রাস্তার পুত্র” অর্থাৎ একজন ভ্রমনকারী, পর্যটক বা মুসাফির।
লুক ১৬ : ৮ - “নূরের পুত্র”।
গীত ৮৯ : ২২ - “দুষ্টের সন্তান”।
৩৬ নং সুরা ইয়াসীন ৮৩ আয়াত - অতএব পবিত্র ও মহান তিনি যার হস্তেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব।
২০ নং সুরা ৫ আয়াত - দয়াময় আরশে সমাসীন।
২ বংশাবলী ১৬ : ৯ - তাঁর চোখ দুনিয়ার সব জায়গায় থাকে।
সুতরাং হাত, বসা, চোখ এই সমস্ত শব্দাবলীর মাধ্যমে ঈশ্বরকে বুঝতে আমাদিগকে সাহায্য করে, যদিও আমরা জানি ঈশ্বরের কোন দেহ নাই।
৩. আধ্যাত্মিক পুত্র :
যোহন ৩ : ৬ - আত্মা যে যা জন্মে তা আত্মা।
৪নং সুরা নিসা ১৭১ - ঈশ্বরের বাক্য, আত্মা। যীশু ঈশ্বর থেকে আগত আত্মা - অর্থাৎ যিনি তাঁর কাছ থেকে এসেছেন তিনিও প্রকৃতপক্ষে তাঁর আত্মা।
ইব্রাণী ৪ : ১৫ - তিনি কোন পাপ করেন নি।
বিস্তারিত আলোচনা :
২১ নং সুরা আম্বিয়া ৯১ - তাহার মধ্যে আমি আমার রূহ ফুঁকিয়া দিয়েছিলাম।
২ নং সুরা বাকারা ২৫৩ - পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালী করিয়াছি।
৪নং সুরা নিসা ১৭১ - তাঁর বাণী বা কালাম
১৯ নং সুরা মরিয়ম ৩৫ - সন্তান গ্রহন করা আল্লাহর কাজ নহে, তিনি পবিত্র, মহিমাময়। তিনি যখন কিছু স্থির করেন, তখন বলেন, ‘হও’ এবং উহা হইয়া যায়।
১৯ নং সুরা মরিয়ম ৮৮ - ৯৩ - তাহারা বলে দয়াময় সন্তান গ্রহন করিয়াছেন। তোমরা তো এমন বীভৎস বিষয়ের অবতারনা করিয়াছ। .... সন্তান গ্রহন করা দয়াময়ের জন্য শোভন নহ্ ।
৪৩ নং সুরা যুখরুফ ১৬ - সৃষ্টি ও স্রষ্টার সাথে যুক্ত করা সম্পর্কে। সৃষ্টির পক্ষে কখনও সম্ভব নয় স্রষ্টা হওয়া।
♦ খ্রীষ্টিয়ানেরাও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর সৃষ্ট জীবদের মধ্যে থেকে কাউকে তাঁর সংগে যুক্ত করা সম্ভব নয়। পিতা ও পুত্রের মধ্যকার কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনও প্রযোজ্য করা যায় না।
♦ ৬নং সুরা আনআম ১০১ আয়াত - তাঁর সন্তান হইবে কিরূপে? তাঁর তো কোন ভার্যা নাই ..।
পুত্র কেবল পুরুষ ও নারী হতে জাত। অর্থাৎ মুসলমানগণ ‘পুত্র’ বলতে সম্পূর্ণ মাংসিক / দৈহিক সর্ম্পককে বুঝায়।
♦ খ্রীষ্টিয়ানেরা ‘যীশু’র ক্ষেত্রে কোন রকম মাংসিক বা দৈহিক বিষয় মনে করে না। কিন্তু বিশ্বাস করে, যীশু ঈশ্বরের উপস্থিতি বা সত্তা থেকে বেরিয়ে আসা ঈশ্বরের পুত্র। যোহন ১ : ১ - আরম্ভে বাক্য ছিলেন কিন্তু তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে ১৪ আয়াতে মাংসে মূর্তিমান হলেন।
♦ রোমীয় ১ : ১-৪ প্রেরিত পৌল দৈহিক ও আত্মার পার্থক্য সম্পর্কে বলেছেন। যিশাইয় ৯ : ৬ - বলেছেন, তিনি শক্তিমান ঈশ্বর।
♦ ৫নং সুরা মায়িদা ৭৩ - তিনের মধ্যে একজন :
বাক্য বা কালামের উপাদান হবে হয় কোন ‘অস্তিত্ব’, না হয় কোন গুণগত বৈশিষ্ট্য। তিনি ‘অস্তিত্ব’ হলে খোদার ‘ব্যক্তিত্ব’ যীশুর মধ্যে ‘আর্বিভাব’ লাভ করেছে এবং তাঁর মধ্যে মিশে একাকার হয়েছে। একইভাবে এই উক্তি অনুযায়ী যীশুই ঈশ্বর।
‘পিতা’ বলতে বুঝান ‘ব্যক্তিত্ব’; ‘পুত্র’ বলতে ‘বাক্য/কালাম’ এবং ‘আত্মা’ বলতে বুঝান ‘জীবন’। কালাম হচ্ছে ঈশ্বরের কালাম যা যীশুর দেহের সংগে মিশে গেছে ঠিক যেমনি পানি দুধের সংগে মিশে যায়।
♦ ৪ নং সুরা নিসা ১৭১ - বাণী ও আদেশ (রূহ)
প্রশ্ন হচ্ছে মুসলমানেরা তিন বলতে - ঈশ্বর, মরিয়ম ও যীশুকে একত্র করে ব্যাখা দিতে চান।
৩ । বাইবেলে পিতার পক্ষ থেকে যা প্রকাশ করা হয়েছে :
লুক ১ : ৩১-৩২ - পুত্র বলা হবে
যিশাইয় ৭ : ১৪ ও মথি ১ : ২২ - আমাদের সংগে খোদা
মথি ৩ : ১৬-১৭ - ইনিই আমার প্রিয় পুত্র ...। (বাপ্তিষ্মের পর)
পাহাড়ে মুসা ও এলিয়ের সাথে যখন মিলিত হল তখন মথি ১৭ : ৫ - ইনিই আমার প্রিয় পুত্র।
বাইবেলে যীশুর ঘোষণা :
যোহন ১৫ : ১ আমিই আসল আংগুর গাছ আর আমার পিতা মালী।
যোহন ১০ : ২৭ - ৩০ কেহই পিতার হাত হতে কিছু কেড়ে নিতে পারে না।
যীশুর বিদায় বাণী : যোহন ১৪ : ১২-১৩ আমি পিতার নিকট যাইতেছি।
মান্না খাওয়ার ব্যাপারে : যোহন ৬ : ৩২
পিতা ও পুত্রের ক্ষমতা : যোহন ৫ : ১৯-২৩,২৫
যিহুদীদের শিক্ষা দিতে গিয়ে : যোহন ৮ : ৩৪- ৩৬
শিক্ষার সময় : যোহন ৫ : ১৭-১৮ ও মথি ১১ : ২৭-২৮
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : যোহন ২ : ১৮
সুতরাং তিনিই ঈশ্বর, বাইবেলের ভাষায় যিনি “মানুষ হিসাবে প্রকাশিত হলেন” (১ তীমথিয় ৩ : ১৬)
শিষ্যদের ও নবীদের সাক্ষ্য :
♦ পিতরের সাক্ষ্য : আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র (মথি ১৬ : ১৫-১৬)
♦ যোহনের সাক্ষ্য : ১ যোহন ৫ : ২০
♦ পৌলের সাক্ষ্য : গালাতীয় ৪ : ৪-৫
♦ শলোমন রাজা : হিতোপদেশ ৩০ : ৪-৫
♦ দানিয়েল ভাববাদী : দানিয়েল ৭ : ১৩-১৪
♦ যোহন বাপ্তাইজক : যোহন ৩ : ২৮; ৩১-৩২, ৩৫-৩৬
বাইবেলে পুত্র হচ্ছেন বাক্য এবং ঈশ্বরের সত্তার স্পষ্ট ভাবমূর্তি এবং ইম্মানূয়েল (আমাদের সংগে ঈশ্বর)
কিন্তু আমাদের এই জগতে যতদিন তাঁর অস্তিত্ব ছিল ঈশ্বর তাঁর মহান ভালবাসার কারণে সেই দীপ্তিকে রক্তমাংসের পোষাক দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন, যেন আমরা ঈশ্বরকে দেখতে পাই এবং তাঁর কথা শুনতে পাই।
পুত্র ছিলেন দায়িত্ব পালনকারী, যিনি স্বর্গীয় সত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, উপরন্তু তিনি ছিলেন মানুষের অনুভূতির জন্য খুবই স্পর্শশীল নিয়মে ঈশ্বরকে প্রকাশ করবার মাধ্যম বা উপায়।
= ইব্রীয় ১ : ১-২ ও যোহন ১ : ১৪ =