হযরত ঈসা রুহুল্লাহ’র পুনরুত্থান হলো এক মহান শুভ সংবাদ Resurection of Jesus is a great Good News.

 হযরত ঈসা রুহুল্লাহ’র পুনরুত্থান হলো এক মহান শুভ সংবাদ

Resurection of Jesus is a great Good News.

আবদুল মাবুদ চৌধুরী



হযরত ঈসা রুহুল্লাহ দুই হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি পৃথিবীতে প্রায় ৩০-৩৩ বছর বসবাস করেছিলেন। তারপর ইহুদী সম্প্রদায়ের প্ররোচনায় তৎকালীন রোমীয় শাসকগোষ্ঠি তাঁকে ক্রুশের উপর মৃত্যুদ- দেন এবং কবরস্থ করেন। কিন্তু মৃত্যু তাঁকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি, তৃতীয়দিন তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন বা পুনরুত্থিত হয়েছেন। এই ঘটনাকে বলা হয় ইস্টার সানডে। হযরত ঈসার অনুসারী ঈসায়ীগণ বিশ্বব্যাপীবিগত দুই হাজার বছর যাবত তাঁর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান হবার ঘটনার দিনটিকে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে স্মরণ করে থাকেন। এই দিন ভোরে পৃথিবীর কোটি কোটি ঈসায়ীগণ প্রাথর্নার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বিশেষ রহমত ও দোয়া কামনা করেন। ঈসায়ীদের বিশ্বাস হযরত ঈসার পুনরুত্থান এই জগতের মানবজাতির জন্য এক মহান সংবাদ, যা এই জগত এবং মানবজীবনে অলৌকিক পরিবর্তন এনেছিল।
হযরত ঈসার সময়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন মাত্র বার জন। তাঁদের মধ্যে ছিলো জেলে, কৃষক, খাজনা আদায়কারী। তাঁরা সাধারণ লোক ছিলেন। হযরত ঈসার সাথে কয়েকবছর সময় অতিবাহিত করার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু যখন হযরত ঈসা মৃত্যুবরণ করলেন এবং কবরস্থ হলেন তখন তাঁরা যে যার মতো মনোদুঃখ নিয়ে বাড়ী ফিরে গেলেন। এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেছে। আর কোন আশা নেই। এমন অবস্থায় এক আশ্চর্য সংবাদ পেলো, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ কবরে নেই। মৃত্যু তাঁকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি মৃত্যুকে জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছেন অর্থাৎ মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন।
তারপর এই বার জন সাহাবী সমগ্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়লো এবং হযরত ঈসা মসীহের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলেন। এরপরই তাঁদেরকে ‘ঈসায়ী’ বা ‘খ্রীষ্টিয়ান’ নামে আখ্যায়িত করা হলো। এভাবেই সমগ্র পৃথিবীতে ঈসার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। পৃথিবীতে এমন আর কোন ঘটনা ঘটেনি যে ঘটনা সমস্ত পৃথিবীকে প্রভাবান্বিত করেছে। কিন্তু হযরত ঈসার মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের ঘটনা এমন এক শক্তি ঈসায়ীদের জীবনে এনে দিয়েছিল যা এখনও বিদ্যমান।
হযরত ঈসা নিজে কোন কিতাব বা বই লিখে যান নি। এমনকি তাঁর সময়ে কেউ কোন কিছু লিখেন নি। অথচ তাঁর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের পরে হযরত ঈসাকে নিয়ে এত বেশি পুস্তক রচিত হয়েছে, অন্য কোন বিষয় নিয়ে তা হয় নি। হযরত ঈসার সময় তিনি বা অন্যরা কোন গান বা গজল রচনা করে যান নি কিন্তু তাঁর পুনরুত্থানের পরে তাঁকে নিয়ে এতবেশী গজল বা গান লিখা হয়েছে যা অন্য কোন বিষয় নিয়ে রচিত হয়নি। হযরত ঈসার সময়ে মাত্র একশত মাইলকে কেন্দ্র করে তাঁর কার্যক্রম বিস্তৃত ছিল, কিন্তু তাঁর পুনরুত্থানের পরে তাঁর বাণী সমুদয় পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এখন পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় তাঁর অনুসারীগণ রয়েছে। এখনও লক্ষ লক্ষ মানুষ হযরত ঈসার অনুসারী হচ্ছেন। এভাবেই ঈসায়ী ধর্ম সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে কারণ সত্যিই এটি একটি শুভ সংবাদ। শুধু ভাল সংবাদ নয় এটি ছিল এক মহান সংবাদ।
‘সুসমাচার’ বা গসপেল শব্দটি পুরনো ইংরেজী শব্দ যার অর্থ ‘গুড নিউজ’ বা শুভ সংবাদ। হযরত ঈসা রুহুল্লাহ’র জীবন, মৃত্যু এবং তাঁর পুনরুত্থানকে কেন্দ্র করে ঈসায়ী ধর্ম। তাদের জন্যইএটি গুড নিউজ বা শুভ সংবাদ যারা তা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে। সেজন্যই হযরত ঈসার মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়া বা পুনরুত্থান আমাদের জীবনে বিশেষ ছয়টি অতুলনীয় ফল উৎপাদন করে থাকে।
প্রথমতঃহযরত ঈসার মৃত্যু দ্বারা মানুষপাপের ক্ষমা পেয়েছে এবং পাপ থেকে মুক্তহয়েছে।
কিতাব এই কথা বলে, “আর যে বিজাতি-সন্তানগণ সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করবার জন্য, তাঁর নামের প্রতি প্রেম দেখাবার জন্য ও তাঁর দাস হবার জন্য সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করে রাখে, তাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা-গৃহ আনন্দিত করব, তাদের হোমবলি ও অন্য বলি সকল আমার যজ্ঞবেদির উপরে গ্রাহ্য হবে, যেহেতু আমার গৃহ সর্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলে আখ্যাত হবে। প্রভু সদাপ্রভু, যিনি ই¯্রায়েলের দূরীকৃত লোকদিগকে সংগ্রহ করেন, তিনি বলেন, আমি আরও অধিক সংগ্রহ করে তার সংগৃহীত লোকদিগেতে যোগ করব।” ইশাইয় ৫৬ঃ৬-৮আয়াত।
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার এবাদতের ঘর সকলের জন্য উম্মুক্ত এবং সমস্ত জাতিগোষ্ঠি, ধর্ম, বর্ণ সকলেই হযরত ঈসা রুহুল্লাহ এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খোদার এবাদত করতে পারবে। তাই ঈসায়ী ধর্ম কারো নিজস্ব ধর্ম নয় এটি সার্বজনিন ধর্ম। এখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। মানব কল্যাণে নিবেদিত একটি ধর্ম। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্যই হযরত ঈসার আগমন। তাই কিতাব এই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, “সেই ঈসা আমাদের অপরাধের নিমিত্ত সমর্পিত হলেন, এবং আমাদের ধার্মিকগণনার নিমিত্ত উত্থাপিত হলেন।” রোমীয় ৪ ঃ ২৫ আয়াত। হযরত ঈসা রুহুল্লাহকে খোদা পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি সমস্ত মানুষের গুনাহের যে শাস্তি তা নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে কাফ্ফারা হিসেবে দান করেন এবং তাঁর মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার মাধ্যমে সমস্ত মানুষকে খোদার সামনে ধার্মিক হিসেবে উপস্থিত করতে পারেন। সেজন্য হযরত ঈসার পুনরুত্থান বা ইস্টার সানডে সমস্ত ঈসায়ীদের জন্য খোদা এক অপরিমেয় রহমতের দান।
দ্বিতীয়তঃহযরত ঈসা পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত্যুকে পরাজিত করেছেন, তাই আমাদের আর মৃত্যুকে ভয় করার প্রয়োজন নেই।
মানুষ কিন্তু মৃত্যুকে ভয় করে। কেউ যেন মরতে চায় না। সবাই মনে করে নিজে অমর থাকবে। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বাদ এতই প্রকট যে, অনেকে চিন্তাই করে না তার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পৃথিবীতে বসবাসের জন্য কতটুকু দরকার। নিজের ব্যাপারে সেই পরিমাপটুকু করতে পারে না। যার যতটুকু আছে সে আরো চায়, আরো চায়। চাওয়ার যেন শেষ নেই। একবারও ভাবে না এতটুকু করে কি লাভ, একটি সময়তো আমাকে এই মায়াময়ি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। এতকিছুর পরেও আসলে আমাদেরকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। চলে যাবার সময় আমরা অন্য কারো থেকে বেশী কিছু নিয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু যারা হযরত ঈসা রুহুল্লাহ’র অনুসারী তারা মৃত্যুকে ভয় করে না। তারা জানে মৃত্যু হযরত ঈসার পুনরুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত হয়েছে। তিনি এখন জীবিত। জীবিত হিসেবেই খোদার কাছে বেহেস্তে আছেন। সুতরাং আমার প্রভু মুক্তিদাতা যখন জীবিত তখন আমিও তাঁর সাথে জীবিত থাকবো।
হযরত ঈসা যে জীবিত সেই বিষয়ে কিতাব এভাবে বর্ণনা করেছেন, “কারণ আমাদের প্রভু ঈসা মসীহের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করেছিলাম, তখন আমরা কৌশলকল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁর মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হয়েছিলাম।” ২ পিতর ১ঃ১৬আয়াত। হযরত ঈসার মৃত্যু, কবরস্থ হওয়া এবং পুনরায় জীবিত হওয়া ঘটনাবলী যারা নিজের চোখে দেখেছেন, সেই সব সাহাবীগণ ও অনুসারীগণ নিজেরা সাক্ষী দিচ্ছেন যে, তারা ঐ সব ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন। “আপন দুঃখভোগের পরে তিনি অনেক প্রমাণ দ্বারা তাঁদের নিকটে আপনাকে জীবিত দেখালেন, ফলতঃ চল্লিশ দিন যাবৎ তাঁদিগকে দর্শন দিলেন, এবং খোদার রাজ্যের বিষয় নানা কথা বললেন।” প্রেরিত ১ঃ৩ আয়াত। হযরত ঈসা গোপনে জীবিত হয়ে উঠেন নি। যারা তাঁর সাথে দীর্ঘদিন ছিলেন, যারা তাঁর স্বভাব, আচার-আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানতেন, তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে সেই সব লোকদের সাথেই আরো চল্লিশদিন ছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাও দিয়েছেন। সুতরাং হযরত ঈসার পুনরুত্থিত হবার ঘটনা কোন গল্প নয় কিন্তু বাস্তব। হযরত ঈসার আরেকজন সাহাবী এভাবে তা বর্ণনা করেছেন, “ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করেছি, এবং ইহা আপনিও পেয়েছি যে, কিতাব অনুসারে মসীহ আমাদের পাপের জন্য মরলেন, ও কবর প্রাপ্ত হলেন, আর কিতাব অনুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হয়েছেন, আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন, তারপরে তিনি ইয়াকুবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষে অকাল-জাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন।” ১ করিন্থীয় ১৫ ঃ ৩-৮ আয়াত। উপরোল্লিখিত কিতাবের আয়াত থেকে জানা যায় যে, হযরত ঈসা লোকদৃষ্টির অন্তরালে কিছু করেন নি। তাঁর সমস্ত কিছুর সাক্ষী তাঁর সাহাবী ও সেই সময়ের অনুসারীগণ।
যারা হযরত ঈসার অনুসারি বা উম্মত তাদের পরকালে কোন ভয় নেই। কারণ হযরত ঈসা শুধু জাগতিক মৃত্যুকে জয় করেছেন তা নয়, কিন্তু তিনি আধ্যাত্মিক মৃত্যু অর্থাৎ দোযখের ভয়কেও জয় করেছেন। তাই তাঁর উম্মতেরা জগতের মৃত্যুকে এজন্য ভয় করে না, কারণ তারা জানে এই জগতের মৃত্যু তাদেও জন্য আনন্দেও কারণ তারা হযরত ঈসার সাথে বেহেস্তে থাকতে পারবে। আবার তারা মনে করে যতদিন তাকে খোদা এই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলো জগতের মানুষের কল্যাণের জন্য। জগতের মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ সাধনই প্রত্যেক ঈসায়ীদের জগতে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা। হযরত ঈসার পুনরুত্থানের শক্তি থেকে ঈসায়ীরা এই দৃঢ়তা, সাহস ও ত্যাগের দীক্ষা পেয়েছেন।
তৃতীয়তঃহযরত ঈসার পুনরুত্থানের মাধ্যমে ঈসায়ীরা খোদার রূহ লাভ করেছে।
হযরত ঈসা রূহুল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন, যখন তিনি বেহেস্তে চলে যাবেন, তখন তিনি এক সহায় তার অনুসারিদের জন্য দিয়ে যাবেন, সেই সহায় হলো সত্যের রূহ। সেই সত্যের রূহ ঈসায়ীদেরকে সঠিক পথ দেখাবেন। পরিচালনা করবেন। এবং খোদার সমস্ত সত্য বুঝতে সাহায্য করবেন। আর সেই সত্যের রূহ হলো খোদার রূহ, যা মানব জাতিকে তিনি দান করেছেন। কিতাব এভাবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু পাক-রূহ তোমাদের উপরে আসলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হবে, আর তোমরা যিরুশালেমে, সমুদয় যিহুদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” প্রেরিত ১ঃ৮ আয়াত। হযরত ঈসা রূহুল্লাহ পৃথিবী ছেড়ে বেহেস্তে চলে যাবার পূর্ব মূহুর্তে ঈসায়ীদেরকে এই কথা জানিয়ে দিয়ে গেছেন। আর প্রেরিত ২ঃ১-৩ আয়াতে আমরা দেখতে পাই যে, সেই ওয়াদাকৃত পাক-রূহ ঈসায়ীদেও উপর বর্ষিত হলো। এবং সেই রূহের শক্তিতে তাঁরা সমস্ত মানুষের কাছে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ’র পুনরুত্থানের সাক্ষ্য বহন করা শুরু করলেন। পুনরুত্থানের এটি এক অপরিমেয় খোদার রহমত যে, হযরত ঈসার অনুসারিরা পাক-রূহকে লাভ করলো এবং সেই রূহের শক্তিতে তাঁরা সমুদয় দুনিয়ায় তাঁর বাণী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে লাগলেন।
“এবং বিশ্বাসকারী যে আমরা, আমাদের প্রতি তাঁর পরাক্রমের অনুপম মহত্ত্ব কি। ইহা তাঁর শক্তির পরাক্রমের সেই কার্য্যসাধনের অনুযায়ী, যাহা তিনি মসীহেতে সাধন করেছেন, ফলতঃ তিনি তাঁকে মৃতগণের মধ্য হতে উঠিয়েছেন, এবং বেহেস্তী স্থানে নিজ দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়েছেন, সমস্ত আধিপত্য, কর্ত্তৃত্ব, পরাক্রম, ও প্রভুত্বের উপরে এবং যত নাম কেবল ইহযুগে নয়, কিন্তু পরযুগেও উল্লেখ করা যায়, তৎসমুদয়ের উপরে পদান্বিত করলেন।” ইফিষীয় ১ ঃ ১৯-২১ আয়াত।
পুনরুত্থান যেমনি ভাবে হযরত ঈসা রূহুল্লাহকে সর্বোচ্চভাবে সম্মানিত করেছেন, একই ভাবে যারা তাঁর অনুসারি তাদেরকেও দুনিয়ায় ও বেহেস্তে সম্মানিত করেছেন। যারা সত্যিকারের হযরত ঈসার অনুসারি তারা লাভ করে খোদার রূহ। আর সেই রূহ এই পৃথিবীতে ধার্মিক হিসেবে মানব কল্যাণে নিজেকে পরিচালিত করতে পরিচালনা করে থাকেন। সেজন্য, প্রত্যেক ঈসায়ীদেরকে খোদার রূহে পরিচালনায় পরিচালিত হতে হয়। তারা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকুক না কেন হযরত ঈসা মসীহের সুসমাচার বা সেই শুভ সংবাদ জগতের মানুষের কাছে জানিয়ে থাকেন।

চতুর্থতঃ
হযরত ঈসার পুনরুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, খোদা মানুষকে শর্তহীনভাবে ভালবাসেন।
পৃথিবীর ভালবাসা শর্তযুক্ত ভালবাসা। যারা হযরত ঈসার পুনরুত্থানের মহান সুসংবাদটি জানেন না, বা তা গ্রহণ করতে পারেন নি তারা শর্তহীন ভালবাসতেও জানে না। জগতের ভালবাসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শর্ত যুক্ত থাকে। বিনা লাভে কেউ কিছু করতে চায় না। কিন্তু খোদা মানুষকে শর্ত দিয়ে ভালবাসেন না। কারণ তিনি জানেন মানুষের সীমাবদ্ধতা। তিনি জানেন, মানুষ তাঁর শর্ত পূরণ করে তাঁর কাছে বেহেস্তে যেতে পারবে না। কারণ হযরত আদম ও বিবি হাওয়া (আঃ) একটি মাত্র দেয়া শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে তাঁরা খোদার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেজন্য তিনি হযরত ঈসা রূহল্লাহ’র মাধ্যমে মানবজাতিকে নিঃশর্ত ভালবাসা দান করেছিলেন।
কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “কারণ খোদা জগতকে এমন প্রেম করলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে (হযরত ঈসাকে) দান করলেন, যেন, যে কেহ তাঁকে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। কেননা খোদা জগতের বিচার করতে পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগত যেন তাঁর দ্বারা নাজাত পায়।” ইউহোন্না ৩ ঃ ১৬-১৭ আয়াত।
খোদা যদি মানবজাতির বিচার করতেন তাহলে সেই হযরত নূহের সময়ের জলপ্লাবনের মতো সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু তিনি আমাদের প্রতি ধৈর্যশীল। তিনি চান যেন সমস্ত লোক নাজাত পায় অর্থাৎ তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারে। কোন ধরনের শর্ত পালন করে আমরা সত্যিকারের পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি না। আমাদেরকে শুণ্যহাতে, সম্পূর্ণভাবে নিজেকে তাঁর কাছে সঁপে দিয়ে ক্ষমা লাভ করতে পারি। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানুষকে ভালবাসেন। তিনি আপনাকে আমাকে ভালবাসেন। সেজন্যই তিনি নিষ্পাপ, নিখুঁত হযরত ঈসা রূহুল্লাহকে জগতে পাঠালেন, যেন তাঁর উপরে ঈমান আনার মাধ্যমে সেই নিঃশর্ত ভালবাসা লাভ করতে পারি। হযরত ঈসা মসীহ পুনরুত্থিত হয়ে এখন খোদার কাছে আছেন এবং তিনি পুনরায় দুনিয়ায় আসবেন। যেন আমরা তাঁর মাধ্যমে খোদার সাথে বেহেস্তে থাকতে পারি।
একইভাবে তিনি ঈসায়ীদেরকে আদেশ দিয়েছেন, যেন তারাও পরস্পরকে ভালবাসেন। এটি একটি কঠিন কাজ। কিন্তু যদি কেউ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ’র পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করে, সেই পুনরুত্থানের শক্তিতে অন্যকে ভালবাসা সম্ভব। তাই হযরত ঈসা বলেছেন, “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করেছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানবে যে, তোমরা আমার অনুসারি।” ইউহোন্না ১৩ ঃ ৩৪-৩৫ আয়াত। সেই কারণেই মাদার তেরেসাসহ বহু অগণিত হযরত ঈসার ভক্তগণ মানুষকে ভালবাসতে পেরেছিলেন এবং এখনও মানুষের প্রতি তাদের নিঃশর্ত ভালবাসা বিলিয়ে যাচ্ছেন।
পঞ্চমতঃহযরত ঈসার পুনরুত্থান ঈসায়ীদের জীবনের জন্য খোদার এক মহান উদ্দেশ্য আছে।
ঈসায়ীদের মনে রাখতে হবে যে, তারা হঠাৎ কোন র্দুঘটনাক্রমে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ’র অনুসারি হোন নাই। কি শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী বা গরীব যেই হোন না কেন, আপনার জীবনের জন্য খোদার এক মহান উদ্দেশ্য আছে বলেই আপনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ’র অনুসারি হতে পেরেছেন। আপনাকে তাঁর বিশেষ প্রয়োজন বলেই, হযরত ঈসার পুনরুত্থানের মাধ্যমে আপনাকে তাঁর সন্তান করেছেন। আর সেই উদ্দেশ্য হলো, জগতের সমস্ত মানুষের কাছে, আপনার পাশের মানুষটির কাছে হযরত ঈসার নাজাতের বাণী পৌঁছে দেয়া। সেটি হতে পারে, আপনার অর্থ দিয়ে, সরাসরি বাণী প্রচার করে, সময় দিয়ে, শক্তি দিয়ে, প্রার্থনা দিয়ে, মানসিকভাবে তাদের সাথে থেকে যারা বাণী প্রচারের কাজটুকু করছে।
হযরত ঈসা এই কথা বলেছেন, “কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করতে ইচ্ছা করে, সে তা হারাবে, কিন্তু যে কেহ আমার এবং সুসমাচারের নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তা রক্ষা করবে।” মার্ক ৮ ঃ ৩৫ আয়াত। আজ আমাদের সমাজে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, যারা নিজের প্রাণকে রক্ষা করতে এত বেশী ব্যস্ত যে, তার জীবনের জন্য খোদার উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। তারা মনে করে জাগতিক নেতা হওয়া, ধনী হওয়া, গাড়ী-বাড়ীর মালিক হওয়াই সবচেয়ে শান্তি ও নিশ্চিত জীবন। তারা এসবের পিছনে দৌঁড়তে দৌঁড়তে কখন যে আসল প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে সে নিজেই জানে না।
আজকে যারা মনে করছেন, আপনি ঈসায়ী, আপনি হযরত ঈসার অনুসারি, আপনি কি একবার ভেবে দেখবেন, আপনার বিষয়ে মানুষ কি এই কথা বলছে, “আমাদের প্রিয় যে বার্ণনা ও পৌল আমাদেও প্রভু ঈসা মসীহের নামের নিমিত্ত প্রাণপণ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে উঁহাদিগকে তোমাদের নিকটে পাঠাইতে বিহিত বুঝিলাম”। প্রেরিত ১৫ঃ২৬ আয়াত। অথবা আপনি কি হযরত পৌলের মতো মাথা উচুঁ করে বলতে পারছেন, “বস্তÍতঃ আপাততঃ আমাদের যে লঘুতর ক্লেশ হয়ে থাকে, তা উত্তর উত্তর অনুপমরূপে আমাদের জন্য অনন্তকালস্থায়ী গুরুতর প্রতাপ সাধন করতেছে, আমরা তো দৃশ্য বস্তু লক্ষ্য না কওে অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করতেছি, কারণ যা যা দৃশ্য, তা ক্ষণকালস্থায়ী, কিন্তু যা যা অদৃশ্য, তা অনন্তকালস্থায়ী”। ২ করিন্থীয় ৪ঃ১৭-১৮ আয়াত।
প্রতিটি ঈসায়ী বিশ্বাসীদের জন্য খোদার উদ্দেশ্য যেন সে অন্যের জন্য বেঁচে থাকে। যেন সে খোদার দাওয়াত অন্যের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেঁচে থাকে। কারণ আপনার পাশের প্রতিবেশী মানুষটি যদি খোদার সামনে হাজির হয়ে এই অভিযোগ করে বলে, খোদা তোমার এই ঈসায়ী বিশ্বাসী লোকটি আমাকে হযরত ঈসার মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়ে কিছুই বলে নি। তখন খোদার কাছে আপনার কি জবাব থাকবে? তাই আমাদের জীবনে খোদার উদ্দেশ্যেও কথা বলতে গিয়ে হযরত পৌল বলেছেন, কেননা আমার পক্ষে জীবন মসীহ, এবং মরণ লাভ।” ফিলিপীয় ১ঃ২১আয়াত।

ষষ্টতঃ
হযরত ঈসার পুনরুত্থানের কারণেই ভবিষ্যতে ঈসায়ীরা বেহেস্তে আনন্দিত থাকবে।
পৃথিবীতে মানুষ ধর্ম-কর্ম করে কারণ সে বা তারা যেন জাগতিক মৃত্যুর পরে পরকালে অনন্তকাল বেহেস্তে খোদার সাথে আনন্দে অতিবাহিত করতে পারেন। যদি আপনি নাই বুঝেন যে, আপনার মৃত্যুর পর আপনি বেহেস্তে যাবেন তাহলে এত সব ধর্ম-কর্ম করে কি লাভ। কিন্তু হযরত ঈসার পুনরুত্থান সমস্ত ঈসায়ীদেরকে সেই আশা দিয়েছেন। পুনরুত্থান এই কথা বলে, তুমি ভয় করো না, কারণ তুমি মরলেও আবার শেষকালে জীবিত হয়ে খোদার সাথে থাকতে পারবে। কারণ হযরত ঈসাও মরেছিলেন, কিন্তু তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে আমাদের আগে বেহেস্তে আছেন। তাই তাঁর অনুসারী হিসেবে তুমিও একইভাবে খোদার সাথে বেহেস্তে থাকতে পারবে। বিষয়টি কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন একটা সম্পত্তি পাবার আশ্বাস আমরা পেয়েছি যা কখনও ধ্বংস হবে না, যাতে খারাপ কিছু থাকবে না এবং যা চিরকাল নতুন থাকবে। এই সম্পত্তি তোমাদের জন্য বেহেশতে জমা করা আছে।” ১ পিতর ১ঃ৪ আয়াত।
হযরত ঈসার সমস্ত অনুসারিদের জন্য খোদার ওয়াদা, তারা বেহেস্তে খোদার সাথে থাকবে। এটি পূর্ব নির্ধারিত হয়েছে, যেদিন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। সেই পুনরুত্থানে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা বেহেস্তে যাবার নিশ্চয়তা পেয়েছি। হযরত পৌল সেই বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেছেন, “চক্ষু যা দেখে নাই, কর্ণ যা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যা উঠে নাই, যা খোদা, যারা তাঁকে প্রেম করে, তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন।” ১ করিন্থীয় ২ ঃ ৯আয়াত। আপনি হয়তো ভাবছেন এটি কিভাবে সম্ভব? তা হয় নাকি! আমার কোন কিছুর করার প্রয়োজন নেই? এগুলো অবাস্তব? এরকম হাজারো প্রশ্ন মনের মধ্যে করতে পারেন। কিন্তু বাস্তুব হলো, আমরা নিজের ক্ষমতা বা শক্তি দিয়ে অসীম ও পবিত্র খোদাকে সন্তুষ্ট করতে পারি না। কিন্তু বিশ্বাস করুন মানবজাতির জন্য অর্থাৎ আপনার জন্য এটিই খোদার একমাত্র পরিকল্পনা। “কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, খোদা তাঁকে মৃতগণের মধ্য হতে উত্থাপন করেছেন, তবে নাজাত পাবে।” রোমীয় ১০ঃ৯আয়াত।
সুতরাং হযরত ঈসা রূহুল্লাহ’র মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান বা জীবিত হয়ে উঠা ঘটনা প্রত্যেক বিশ্বাসীকে ঈসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতে সাহায্য করে। এটি ঈসায়ীদেও জীবনকে ধর্মীয় ভাবে অর্থবহ করে। এই শুভ সংবাদ অন্যেও কাছে সাক্ষ্য বহন করতে অনুপ্রাণিত করে। এটি খোদার সান্নিধ্য লাভে ঈসায়ীদেরকে ধাবিত করে। এই মহান শুভ সংবাদ প্রত্যেক ঈসায়ীদেরকে একটি প্রত্যাশিত জীবন দান করে।
সকলের প্রতি রইলো হযরত ঈসা মসীহের পুনরুত্থানের শুভেচ্ছা।