ঈমানদারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ঈমানদারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

  ইমাম আবদুল মাবুদ চৌধুরী

 
 
 

ঈসায়ীদের বিজয়ী জীবন যাপন


 
ঈসায়ী জীবনে কিভাবে নিরুৎসাহ আসে?
 
 
ঈসায়ী জীবন দৌঁড়ের প্রতিযোগিতার মত (ইব্রাণী ১২ : ১-২ আয়াত)। কিভাবে আমরা দৌঁড়ছি সেই বিষয়ে আমাদেরকে খুবই সর্তক থাকতে হবে।
ইমানদার জীবনে হতাশা ও নিরুৎসাহ একটা বড় বোঝা। তাই চিন্তা করতে হবে কিভাবে আমরা প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পারি।
হযরত নহিমিয় নবীর জীবনী দেখলে আমরা সেখান থেকে এই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারি (নহিমিয় খ- ৪ : ১০-২৩ আয়াত)।
হযরত নহিমিয় নবীর জীবনে নিরুৎসাহ আসতে পারে সেরকম কয়েকটি কারণ এখানে আমরা দেখতে পাই। যেমন :
 
 
♦      বিরোধী পক্ষ ষড়যন্ত্র করল (৬-৮আয়াত);
 
♦      নিজের লোকেরা ভয় পেল এবং অভিযোগ করল যে, লোকেরা দুর্বল হয়েছে এবং অনেক পাথরের টুকরা রয়েছে (১০ আয়াত)
 
♦      শক্ররা যে কোন সময় আক্রমন করতে পারে (১১আয়াত)
 
*করণীয়- সবাই মিলে মোনাজাত করলেন এবং পরিকল্পনা করলেন এবং সবাইকে সাহস দিলেন। আর খোদার ওয়াদার কথা স্মরণ করলেন (১৩-১৫আয়াত)।
 
 
বর্তমান জগতের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জীবনেও এভাবে নিরুৎসাহ আসতে পারে। তখন আমাদের করণীয় কি হতে পারে (১ম পিতর ৫ : ৮-১০ আয়াত)।
 
 
 
নিরুৎসাহ আসার কারণ :
 
 
♦      পুরুস্কারের কথা ভুলে গিয়ে দুর্বলতা নিয়ে চিন্তা করি। লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টিপাত না করে সব সময় সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিই।
 
♦      অল্প দৌঁড়লে পর শয়তান বলবে আর দৌঁড়িও না। আর পাক-রূহ্ বলছেন, তুমি দৌঁড়াও আমি তোমাকে সাহায্য করব।
 
 
 
কিভাবে আমরা নিরুৎসাহ হতে জয় লাভ করব?
 
 
♦      নিজের গুনাহ্ স্বীকার করতে হবে (১ ইউহোন্না ১ : ৯ আয়াত)
 
♦      বিশ্রামের জন্য সময় দিতে হবে। শুধু যে আমরা দৈহিকভাবে দুর্বল হই তা নয়, রূহানিকভাবেও দুর্বল হয়ে যাই। কারণ আমাদের জীবনে অনেক সময় নিরব সময়, মোনাজাতের সময় এবং খোদার এবাদত ইত্যাদি থেকে দুরে সরে যাই।(মথি ৬ : ৩৩; ৭ : ৭-৮ আয়াত)। হযরত নহিমিয় সবাইকে সাহস দিলেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থেকেই কাজ আরম্ভ করলেন।
 
♦      আমাদের ইমানদার জীবন অনেকটা একই রকম। আমরাও সব সময় যুদ্ধে নিয়োজিত। মসীহের জন্য জীবন যাপন করাই হলো- যুদ্ধে জড়িত থাকা (ইফিষীয় ৬ : ১০-১৭ আয়াত)।
 
♦      একতায় থেকে কাজ করা। (নহিমিয় ৪ : ১৯-২১আয়াত) তাদের মধ্যে একতা ও মহব্বত ছিল।
 
আমাদের মধ্যে একতা না থাকলে শয়তান সমস্যা বৃদ্ধি করে। একতার মধ্যে দাঁড়িয়ে না থাকলে সহজে আমরা পড়ে যাব। শয়তান চায় যেন আমাদের মধ্যে একতা না থাকে। তাই শয়তান আমাদের মাঝে সমালোচনা, নিরুৎসাহ, নিন্দা ইত্যাদি নিয়ে আসে।
 
 
 
আপনি কি অন্যকে উৎসাহ দিয়ে থাকেন?
 
 
অনেক সময় আমরা চিন্তা করি, আমি একাই সব করতে পারি। আমি ভাল লোক। কিন্তু আমাদের উচিত একে অন্যকে সাহায্য করার চিন্তা করা। নিজের বিষয় চিন্তা না করে অন্যের বিষয়ে চিন্তা করা।
সব সময় যেন আমরা একতা ও মহব্বতের অস্ত্র পড়ে রাখি। নিজেদের মধ্যে একতা, মহব্বত ও উৎসাহ বজায় রাখি।
খোদা আপনাকে ব্যবহার করবেন। এবং একে অন্যের জন্য মোনাজাত করতে পারেন। (রোমীয় ৮ : ২৮ আয়াত)।।
 
 
 
 
শৃংখলায় জীবন যাপন করা
 
 
যার জীবনে শৃংখলা নাই, সে খোদার কাজে ব্যবহৃত হতে বাধা পায়।
 
১.       শৃংখলা : খোদার সাথে ব্যক্তিগতভাবে এবাদত করা
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে দু’টি জিনিষ থাকতে হবে। তা হলো-
 
ক)      নিরব সময় ও   খ) মোনাজাত
 
মনে রাখতে হবে, আপনি নিজে যতটুকু অন্যকেও ততটুক শিক্ষা দিতে পারেন। আপনি নিজে যতটুকু পরিপক্ক অন্যকেও ততটুকু পরিপক্ক করতে পারবেন। তাই আমরা যেন পরিপক্ক হতে পারি সেজন্য প্রতিদিন খোদার সাথে নিরবে সময় দিতে হবে। নিরবে সময় বলতে বুঝায়-
 
(১)      খোদার সাথে সময় দেওয়া
 
(২)     খোদার সহভাগিতা বা উপস্থিতি নিজের জীবনে উপলদ্ধি করা
 
(৩)     খোদার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
 
একজন উত্তম নেতা দলের প্রত্যেকের কাছে নিজের পরিকল্পপনা জানিয়ে থাকেন। একইভাবে খোদার সাথে নিরবে সময় দেয়া হলো- খোদাকে নিজের সব জানানো।
 
 
 
নিরব সময় দেয়ার মূল লক্ষ্য হলো :
 
ক)      খোদাকে জানা। খোদার সন্তান হিসাবে খোদাকে জানা আমাদের অধিকার।
 
খ)       যেন মসীহেতে আমাদের রূহানিক জীবন বৃদ্ধি পায়। রূহানিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না সেই রকম লোক অনেক পাবেন। কারন তারা খোদার সাথে নিরবে সময় দেয় না।
 
গ)       এই পৃথিবীতে কিভাবে জীবন যাপন করব তা জানার জন্য।
 
ঘ)       পাক-রূহের পরিচালনা যেন নিজের জীবনে বুঝতে পারি। কিতাব এই কথা বলে- পাক-রূহ আমাদের অন্তরে নিরবে কথা বলে থাকেন।
 
ঙ)       শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য, যেন তার প্রতিরোধ করতে পারি। নিরবে খোদার সাথে সময় দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর কাছ থেকে শক্তি লাভ করতে পারি।
 
চ)       যেন প্রতিবেশীর সাথে আমরা শান্তিতে বাস করতে পারি।
 
 
 
কখন খোদার সাথে নিরবতায় সময় দিতে পারি?
 
 
হযরত দাউদ নবী ভোরে মোনাজাত করতেন (জবুর শরীফ ৫ : ৩ আয়াত)।
অনেক খোদা ভক্তের জীবনে এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সময় খোদার কালাম পাঠ করা, মোনাজাত করা এবং নিরবে সময় দেয়া।
হযরত আইয়ুব নবীর জীবনে তাঁর প্রয়োজনীয় খাবার থেকে খোদার কালাম তাঁর কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল (আইয়ুব খ- ২৩ : ১২; মথি ৪ : ৪ আয়াত।
সুতরাং আমাদের নিজেদেরকে সুবিধামত সময় ও স্থান ঠিক করতে হবে, যেখানে আপনি নিরবে খোদার সাথে কিছু সময় দিতে পারেন। তাই নিরবে সময় দিবার জন্য আপনাকেই প্রধান লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে যে, আপনার জীবনে প্রথম ও প্রধান কি? খোদা বা অন্য কোন কিছু।
 
 
 
নিরব সময়ে ২টি অংশ থাকবে
 
 
প্রথমতঃ খোদা অন্তরে কথা বলেন। খোদা কিভাবে আমাদের অন্তরে কথা বলেন? তাঁর কালামের মধ্যে দিয়ে। তাই যে কিতাব পড়ে না, সে খোদার রব শুনবে না। এবং খোদার কালাম বুঝতেও পারবে না।
 
 
কিতাব পাঠের ৪টা নিয়ম :
 
 
১.প্রেমের পত্রের মত মনে করে পাঠ করা। আমরা যদি আমাদের কোন প্রিয়জনের কাছ থেকে কোন চিঠি পাই তা শুধু মধ্যে বা প্রথমে পাঠ না করে, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পাঠ করি। একইভাবে পাক-কিতাব হলো খোদার ও মানুষের মধ্যে মহব্বতের চিঠি।
 
 
২.মাছ খাওয়ার মত করে পাঠ করা। (এই উপমাটি হয়তো সম্পূর্ণ নাও মিলতে পারে)। যখন কেউ মাছ খায় তখন সে মাছের কাঁটা বেছে এক পাশে রেখে দেয়। অনেকে সম্পূর্ণ কিতাব পড়া আরম্ভ করে প্রথমে পয়দায়েশ খ- পাঠে বেশ আনন্দ লাগে। কিন্তু লেবীয়, শুমারী খ- যখন পড়ে বুঝতে পারে না তখন কিতাব পড়া বন্ধ করে দেয়। যে খ- ভাল লাগে তা পড়ে, কিন্তু অন্য খ- পড়ে না। কিন্তু উচিত সম্পূর্ণ কিতাব পাঠ করা। তাহলে আপনি আসল বিষয় ও অনেক কিছু জানতে পারবেন।
 
 
৩.       কিতাব পাঠের সময় মনে মনে কিছু প্রশ্ন রাখেন? যেমন-
 
ক)      যে অংশ পাঠ করলেন, সেখানে কি কোন দৃষ্টান্ত আছে, যা আপনার জীবনে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
 
খ)       এখানে কি কোন আদেশ দেওয়া আছে, যা আমার পালন করা উচিত।
 
গ)       এখানে কি কোন কিছু নিষেধ করা হয়েছে, যা আমার করা উচিত নয়।
 
ঘ)       এমন কোন চেতনা আছে, যা আমার জীবন থেকে পরিত্যাগ করা উচিত। কোন নিদিষ্ট গুনাহ।
 
ঙ)       কোন ওয়াদা আছে, যার উপর ঈমানকে আরো শক্তভাবে ধরে রাখতে পারি। কিতাবে প্রায় ৬০০০ ওয়াদা রয়েছে।
 
চ)       এখানে কি কোন নুতন শিক্ষা আছে- খোদার চরিত্র সম্বন্ধে। খোদাকে জানা আমাদের উচিত। খোদা সম্বন্ধে অনেকের ভুল ধারনা থাকে। কিন্তু আপনি যখন কিতাব পাঠ করবেন, তখন কিতাব খোদা সম্বন্ধে কি বলে তা দেখতে হবে।
 
ছ)       যদি নুতন কোন শিক্ষা পেয়ে থাকেন তা প্রয়োজনে নোট খাতায় লিখে রাখেন।
 
দ্বিতীয়তঃ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে খোদার সাথে কথা বলা।
আমরা হযরত ঈসা মসীহের জীবনী দেখতে পারি। এই জগতে তাঁর জীবনে কি রকম আর্দশ ছিল? তাঁর জীবনেও মোনাজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তাই আমাদের জীবনেও মোনাজাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
 
 
হযরত ঈসা মসীহ্ কিভাবে মোনাজাত করেছেন-(একা, নিরবে)
 
 
লুক ১ : ৩৭ আয়াতে বলা হয়েছে, খোদার কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। যখন আমরা শক্তিহীন মনে করি, তখন এই আয়াত আমাদের মনে রাখা দরকার। এরপরই দেখা যায় যে, খোদা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। হযরত মরিয়মকে (অবিবাহিত অবস্থায়) সন্তান দিলেন। সেই সন্তান হলেন হযরত ঈসা মসীহ। ইতিপূর্বে তিনি হযরত জাকারিয়ার স্ত্রী বিবি এলিজাবেতের গর্ভে সন্তান দিলেন। তিনি হলেন হযরত ইয়াহিয়া নবী।
 
 
 
হযরত ঈসা মসীহের মোনাজাতের জীবন আমাদেরকে উৎসাহিত করে।
 
 
লুক ৩ : ২১ আয়াত : হযরত ঈসা মসীহ্ মোনাজাত করলেন। যখন মোনাজাত করলেন তখন কি ঘটল।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ৩০ বছর যাবৎ কাঠ মিস্ত্রীর ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এটি তাঁর প্রথম বাহিরে আত্ম প্রকাশ। এই সময় থেকে তিনি তাঁর কাজ আরম্ভ করলেন। আর তা তিনি আরম্ভ করলেন মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। নিজে খোদার পুত্র হয়ে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে কাজ আরাম্ভ করলেন। যদিও এটি ব্যক্তিগত মোনাজাত নয় তা ছিল জনসম্মুখে। আমরাও ব্যক্তিগত মোনাজাত অনেক সময় করতে পারি।
 
 
লুক ৫ : ১৫-১৬ আয়াত : তখন টেলিফোন, খবর কাগজ, রেড়িও, বাস ট্রাক কিছুই ছিল না। কিন্তু তিনি যা করেছেন তা সবাই জানত। তাঁর শিক্ষা শুনার জন্য অনেকে আসতেন। তাঁর কাছে কোন হাসপাতাল ছিল না। কিন্তু অসুস্থ লোকেরা আসত। অনেক লোক তাঁর কাছে এসে ভিড় করত। সেই সমস্ত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ আসত খাবারের জন্য অথবা শিক্ষা শুনার জন্য অথবা সুস্থ হবার জন্য। এতে তিনি খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অবশ্য লোকদের জন্য তাঁর অনেক চিন্তাও ছিল। আর এত ব্যস্ততার জন্য মোনাজাতের কথা ভুলে যাওয়া সহজ। কিন্তু -
১৬ আয়াতে লেখা আছে, হযরত ঈসা মসীহ মোনাজাত করতেন। তাঁর সময় ছিল না, তবে তিনি সময় করে নিতেন।
খোদাকে জানা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হযরত ঈসা মসীহ্ খোদাকে জানার জন্য অনেক সময় দিয়েছেন।
 
 
হযরত ঈসা মসীহ্ সম্বন্ধে জানার জন্য আমাদের দেশে কোটি কোটি লোক আছে। আমরা যদি তাদের কাছে মসীহের নাজাতের কথা না বলি তাহলে তারা তা কিভাবে শুনবে। কিন্তু আমাদের শক্তি / খাবার না থাকলে এই কাজ করতে পারি না। আর মোনাজাত ছাড়া এই কাজ করতে গেলে এর তেমন কোন ফল পাওয়া যাবে না।
 
 
লুক ৬ : ১২ আয়াত : এখানেও আমরা দেখতে পাই যে, হযরত ঈসা মসীহ্ সমস্ত রাত্রি একা মোনাজাত করলেন। এখানেও মোনাজাতের গুরুত্ব দেখা যায়। তিনি যে শুধু মোনাজাত সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছেন তা নয় কিন্তু তিনি নিজে মোনাজাত করেছেন। তাই শিক্ষা দেবার থেকে কাজে প্রমাণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
 
 
আমরা মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে একাত্ম হতে পারি। আমাদের অনেক দূর্বলতা মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে। যদি মোনাজাত না থাকে তাহলে শয়তান সহজে আমাদেরকে আক্রমন করতে পারে। হযরত ঈসা মসীহের এই আদর্শ আমাদের অনুসরন করা কর্তব্য। কারণ আমরা সবাই রূহানিক যুদ্ধে নিয়োজিত।
 
মসীহ সারারাত মোনাজাত করলেন ১২জন সাহাবীকে মনোনিত করতে। এখান থেকে আমরা শিখতে পারি যে, কোন সিদ্ধান্ত নিবার সময় মোনাজাত করতে হবে।
লুক ৯ : ১৮, ২৮, ২৯ আয়াত : আগে আমরা দেখেছি হযরত ঈসা মসীহ্ একা মোনাজাত করেছেন। এখন দেখি সাহাবীদের সাথে নিয়ে মোনাজাত করছেন। একইভাবে একে অন্যের সাথে মোনাজাত করা আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
 
লুক ১১ : ১ আয়াত : হযরত ঈসা মসীহ্ মোনাজাত করেছেন। তারপর সাহাবীরাও বললেন যেন তাঁদেরকে মোনাজাত করতে শিক্ষা দেন।
হযরত ঈসা মসীহের মোনাজাতের ফলে সাহাবীরাও তা শিখতে চাইল, যেন তাঁরা মোনাজাত করতে পারেন। ইঞ্জিল শরীফের প্রথম ৪টি সুসমাচার খ-ে এই একটি বিষয় পাবেন, সাহাবীরা মসীহের কাছে এসে কেবল মোনাজাত শিখতে চাইলেন, অন্য কিছু নয়।
 
সাহাবীরা অনেক আশ্চর্য্য কাজ দেখেছিলেন। অন্ধ, পঙ্গু লোককে সুস্থ করতে, ৫০০০ লোককে খাওয়াতে, মৃতকে জীবন দিতে, এছাড়াও অনেক আশ্চর্য্য কাজ তাঁরা দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁরা এত কিছু দেখার পরেও মাত্র একটা বিষয় শিখতে চাইলেন তা হলো- শুধু মোনাজাত করা। সে সময় যদি আমরা উপস্থিত থাকতাম তাহলে তাঁর কাছ থেকে কি শিখতে চাইতাম? আমার মনে হয়, তখন হয়ত আমি অন্য কোন আশ্চর্য্য কাজ শিখাইতে বলতাম।
 
সাহাবীরা হযরত ঈসা মসীহের মোনাজাত দেখেছিলেন এবং মোনাজাতের শক্তিও দেখেছিলেন। তাই তাঁরা শুধু মোনাজাত শিখতে চাইলেন। সুতরাং আমাদের জন্যও মোনাজাত বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
 
লুক ১৮ : ১-৮ আয়াতে মসীহ মোনাজাতের বিষয় শিক্ষা দিতেছেন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে।
 
মোনজাত করতে গিয়ে যেন আমরা নিরুৎসাহ না হই। বরং মোনাজাতের উত্তর না পাওয়া পর্য্যন্ত যেন ক্লান্তহীনভাবে মোনাজাত করতে থাকি।
লুক ১৯ : ৪৫-৪৬ আয়াত : এবাদতখানাকে ব্যবসার স্থান করে রেখেছিল। হযরত ঈসা মসীহ্ এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিলেন। এবং তিনি বললেন, এই গৃহ মোনাজাতের গৃৃহ হবে।
 
আজ বাংলাদেশে অনেক জামাত প্রয়োজন যেগুলো মোনাজাতের স্থান হবে। অনেকে ভাল কাজ করে কিন্তু দেখা যায় মোনাজাতের জন্য সময় নেই। আমাদের জামাত গড়ে তোলতে হবে যেন সেটি মোনাজাতের ও এবাদতের ঘর হয়। যেখানে মোনাজাত আছে সেখানের কাজ শক্তিশালী হয়।
 
লুক ২২ রুকু : হযরত ঈসা মসীহের জগতে থাকার শেষ দিনগুলি। হযরত ঈসা মসীহ্ পর্ব্বতে মোনাজাত করতে গেলেন। ৩৯-৪৫ আয়াত :
প্রথমে তিনি স্বাভাবিক নিয়ক অনুসারে মোনাজাত করতে গেলেন। কিন্তু মোনাজাত করতে করতে তাঁর শরীর থেকে ঘাম ও রক্ত আসতে পড়া আরম্ভ হলো।
 
মোনাজাত হলো রূহানিক যুদ্ধ। মোনাজাতে সময় ও শক্তি দিতে হয়।
আমাদের মোনাজাত যেন হারানো লোকের জন্য হয়, যারা এখনও নাজাত লাভ করতে পারে নি। কিন্তু আমরা যেন সাহাবীদের মত ঘুমিয়ে না পড়ি সেজন্য মোনাজাত করা শিখতে হবে।
 
 
লুক ২৩ : ৪৬ আয়াত : হযরত ঈসা মসীহ্ ক্রুশের উপরও মোনাজাতের মাধ্যমে তাঁর রূহ খোদার হাতে সঁপে দিলেন।
 
 
তিনি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কাজ আরাম্ভ করেছিলেন এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সেই কাজ শেষ করলে।
হযরত ঈসা মসীহের জীবন মোনাজাতের জীবন ছিল। তিনি শুধু শিক্ষা দেন নি, সাথে সাথে নিজের জীবনে দেখিয়েছেন।
আমাদের পরিবার ও সন্তানেরা আমাদের দেখে কি শিখবে? তারা কি বলতে পারবে, আমাদের পরিবারে মোনাজাত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আপনার আমার সম্পর্কে লোকে কি চিন্তা করে? আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি কি করবেন?
আমরা কখনও মোনাজাত করার দায়িত্ব শেষ করতে পারি না। যতই ঈমানে বৃদ্ধি পাব, ততই মোনাজাতের গুরুত্বও আরো বৃদ্ধি পাবে।
মোনাজাত ও কিতাব পাঠ ব্যক্তিগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রূহানিক জীবনের নিঃশ্বাস আমরা নিয়ে থাকি নিরবে খোদার সাথে কিতাব পাঠে ও মোনাজাতে। যখনই আমাদের জীবনে তা বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই আমরাও মারা যাব যেমন দেহে স্বাসঃনিশ্বাস না থাকলে লোকে মৃত বলে।
 
সুতরাং ঈমানদার জীবন তখনই বিজয়ী জীবন হবে, যখন আমাদের সাথে খোদার সাথে সম্পর্ক বিরাজ করবে। একজন ঈমানদার হিসেবে আমাদের জীবনে এটি একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য। খোদা আমাদের সকলকে তা পালন করার তৌফিক দান করুক।
 
আমেন।।
 
 
 
 
সমাপ্ত