দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার উপর কিভাবে জয় লাভ করা যায়

দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার উপর কিভাবে জয় লাভ করা যায়

   ইমাম আবদুল মাবুদ চৌধুরী
                                                                                                                       
ভূমিকাঃ
 
অনেক সময় এমন দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষা আসে তখন খুবই কঠিন ভাবে ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়। অনেক সময় পরিবার থেকে, জামাত থেকে ও বন্ধু-বান্ধব থেকে সমস্যা আসবে। কিন্তু তখন এই সব সমস্যার উপর কিভাবে আমরা বিজয়ী হব। সেজন্য আমাদের জানতে হবেÑ কিভাবে আমরা এর উপর জয়লাভ করতে পারি?
ইঞ্জিল শরীফ; ইয়াকুব খ- ১ : ২ - ৪ আয়াত
কিভাবে দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার সময় জয়লাভ করা যায় সেই বিষয়ে এখানে হযরত ইয়াকুব ৫টি প্রশ্ন করেছেন। যথাঃ
 
 
১.পরীক্ষার সময় কি রকম মনোভাব থাকা উচিত?
 
আনন্দ : আসলে যখন পরীক্ষা আসে তখন কি আনন্দ থাকে? কিন্তু আমাদের ব্যবহারিক জীবনে তা সাধারণত গ্রহন করতে হবে যদিও কঠিন।
দু’ভাবে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে দুঃখ-কষ্ট আসে
 
 
 
ক)আবেগ : আবেগ অনেক সময় বাহিরে প্রকাশ হয়। তাই এই অংশে হযরত ইয়াকুব বলেছেন, বাহিরে কোন কিছু হলে তাতে আমাদের আবেগ যেন বেড়ে না যায়।
 
 
খ)মনোভাব : ফিলিপীয় ২ : ১ - ২ আয়াত Ñ হযরত পৌল বলেছেন, হযরত ঈসা মসীহের যে মনোভাব ছিল তা আমাদের জীবনে থাকতে হবে। হযরত ঈসা মসীহের মনোভাব ছিলÑ সেবা করা এবং গোলাম হওয়া। যদিও তিনি ক্ষমতাবান ছিলেন, তবুও তিনি সেবক ও গোলাম হলেন। একইভাবে হযরত ইয়াকুব বলেছেন, পরীক্ষাকে যেন আনন্দ নিয়ে গ্রহন করি। আনন্দের বিপরীত হলো তীক্ততা। আর পরীক্ষার সময় যারা খোদার প্রতি তীক্ততা প্রকাশ করে তারা খোদার দেয়া আনন্দ বুঝতে পারে না।
 
 
হযরত আইয়ুব নবী : তাঁর জীবনে কত দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষা এসেছিল। তিনি সমস্ত ধন-সম্পদ হারিয়েছিলেন, স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়েছিলেন এবং সমস্ত আত্মিয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের হারিয়েছিলেন। তবুও তিনি খোদার প্রতি তীক্ততা প্রকাশ করেন নি। বরং সমস্ত প্রতিকূল অবস্থায় আনন্দ করেছিলেন।
 
 
 
দুঃখ-কষ্টের সংজ্ঞা : 
 
♦ রূহানিক জীবনের পরিপক্কতা ও বৃদ্ধিদান করে
♦ ঈমানের নিশ্চয়তা দান করে
♦ যে বুঝতে পারে দুঃখ-কষ্টে রূহানিক বৃদ্ধি লাভ হয়, সে দুঃখ-কষ্টে আনন্দ করতে পারবে।
♦ খোদার উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
 
 
 
২.কখন দুঃখ-কষ্ট জীবনে আসে?
 
 
যে কোন সময় দুঃখ-কষ্ট আসতে পারে। কারণ এ জগতে তা আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। তাই দুঃখ-কষ্টে আশ্চর্য হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু আমাদেরকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। খোদা আমাদেরকে হযরত ঈসা মসীহের মাধ্যমে অনন্তকালের জন্য প্রস্তুত করেছেন। আমাদের পরীক্ষার সময় মসীহকে স্মরণ করতে পারি। তিনি পরীক্ষার সময় কি করেছিলেন? তিনি মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত আনন্দের সহিত সমস্ত দুঃখ-কষ্ট গ্রহন করেছিলেন (ইব্রাণী খ- ১২ : ৩ আয়াত)।
 
 
 
৩.দুঃখ-কষ্ট কিভাবে আসে?
 
 
নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট আসতে পারে। হযরত ইয়াকুব এর কোন তালিকা দেন নি। তবুও কিতাবে আমরা এর অনেক দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। যেমনঃ হযরত ইব্রাহিম নবীর জীবনী; হযরত দাউদ নবীর জীবনী;
সুতরাং এটি আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে।
 
 
 
৪.দুঃখ-কষ্ট আসার উদ্দেশ্য কি?
 
খোদা তা আমাদের জীবনে অনুমোদন করেছেন যেন আমরা ধৈর্য্য ও স্থিরতা শিখে সামনের দিকে দৌঁড়াতে পারি।
 
হযরত শিমশোন নবী : তাঁর মাথার চুলের মধ্যে শক্তি ছিল। কাজীগণ ১৩ -১৬ রুকু। তাঁর জীবনে দেখবেন পরীক্ষার সময় ধৈর্য্য ছিল না। ১৪ : ১৩-১৫ আয়াতÑ বিবাহের সময় পোশাক বিলিয়ে দিতে হয়েছিল। ১৬ রুকুতেÑ তিনি দলীলা নামে একজন মহিলাকে বিবাহ করিল, ফলে তাঁর মৃত্যু হলো।
 
 
হযরত ইউসুফ নবী : তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। খোদা তাঁকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। খোদা তাঁকে যুবক বয়স থেকে প্রশিক্ষণ দিতে আরম্ভ করেছিলেন। তাঁর জীবনে পরীক্ষার সময় ধৈর্য্য ছিল। কারাগারেও ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় থাকতে হলো। শেষ ফল তিনি মিশরের প্রধান শাসনকর্তা হয়েছিলেন। এটি সম্ভব হয়েছিল, কারণ তিনি ধৈর্য্য ধরে স্থির থাকতেন এবং খোদার উপর নির্ভর করতেন। খোদা আমাদেরকেও চান যেন আমরা হযরত ইউসুফ নবীর মত হই।
 
 
 
৫.দুঃখ-কষ্ট বা পরীক্ষার শেষে খোদা আমাদের জীবনে কি করতে চান?
 
 
৪ আয়াত আমরা যেন খাঁটি ও সম্পূর্ণ হই। এটিই খোদার চুড়ান্ত লক্ষ্য বা পরিকল্পনা।
প্রত্যেক জামাতে অপরিপক্ক লোক আছে। যারা মসীহেতে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তা প্রথম জামাতেও ছিল। তাই দুঃখ-কষ্ট আসলে শেষে আমরা খাঁটি হব ও রূহানিক জীবনে বৃদ্ধি পাব।
উপসংহার : ১ করিন্থীয় ৩ : ১-২; ইফিষীয় ৪ : ১৪; ইব্রাণী ৪ : ১২আয়াত
এখানে লেখা আছে তোমরা ঈমানে শিশুর মত। আর আমাদের মনে রাখতে হবে যে, খোদা একজন শিশুকে তাঁর রাজ্য বিস্তারে ব্যবহার করতে পারেন না। সেজন্যই এই সেমিনারের আয়োজন।
 
 
আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরীক্ষা আসবে। কিন্তু আমাদেরকে ধৈর্য্য ধারন করতে হবে যেন হযরত ঈসা মসীহেতে ঈমানে আমাদের জীবন সিদ্ধ ও পরিপক্ক হয়। যখন আমরা ধৈর্য্য ধারন করে দৌঁড়াব, তখন খোদা আমাদের জীবনে কাজ করতে পারবে। হযরত ঈসা মসীহ আমাদেরকে সহজ জীবন যাপন করতে বলেন নি, কিন্তু তাঁর ক্রুশ বহন করতে বলেছেন। যদিও তা কষ্টের কিন্তু এতে আনন্দ আছে।
 
 
দু’টি বাস্তব ব্যবহারিক বিষয়ঃ
 
 
ক)দুঃখ-কষ্ট আসলে খোদার উপর বিরক্ত না হয়ে আনন্দ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
 
 
খ)দুঃখ-কষ্টের সময় খোদাকে জিজ্ঞাসা করতে হবেÑ খোদা আমার জীবনের জন্য এ সময় তোমার বিষয়ে কি শিখতে পারি?
 
 
আমরা যেন পরীক্ষার সময়, দুঃখ-কষ্টের সময় বিশ্বস্তভাবে দাঁড়াতে পারি সেই মোনাজাত করতে হবে।
 
 
 
২ করিন্থীয় ১ : ৩-৪আয়াত।
 
 
 
 আমেন।
 
 
 
 
 
 
সমাপ্ত