বাইবেল পরিবর্তিত এবং কোরআন আসমানি কিতাব

Bible changed & Koran is Holy || বাইবেল পরিবর্তিত এবং কোরআন আসমানি ক

 বাইবেল পরিবর্তিত

এবং কোরআন আসমানি কিতাব

বাইবেল পরিবর্তিত !

 যে কোন বিষয় বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে যে বিষয়টি জানতে হচ্ছে তা হচ্ছে - ৬টি প্রশ্নের উত্তর জানা। এটা পরিবর্তন করেছিল কে? তা কখন করেছিল? কেন করেছিল? কি করেছিল? মূল গ্রন্থটি কোথায়? কেমন করেই বা এই কঠিন কাজটি সম্পাদিত হল?
 
 

১. কে ?

 
২ নং সুরা বাকারা ১১৩ - ইহুদীরা বলে, খ্রীষ্টানদের কোন ভিত্তি নাই এবং খ্রীষ্টানরা বলে, ইহুদীদের কোন ভিত্তি নাই; অথচ তারা কিতাব (ঐশীগ্রন্থ) পাঠ করে।
 
 
কোরআন অনুসারে তারা পরস্পরকে দোষারোপ করছে, অথচ কিতাব পরিবর্তন করার দোষ কেউ কাউকে দেখাচ্ছে না। যীশু নিজে ইহুদীদের কপটতার বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছেন (মথি ২৩ অধ্যায়) কিন্তু তিনি তাদেরকে ধর্মীয় গ্রন্থ পরিবর্তন করার দোষে অভিযুক্ত করেন নি।
 
 
তাহলে কি যীশুর শিষ্যগণ এই পরিবর্তন করেছেন? ৫নং সুরা মায়িদা ৮২ - ... এবং যারা বলে ‘আমরা খ্রীষ্টান’ মানুষের মধ্যে তা’দিগকেই তুমি মু’মিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখিবে, কারণ তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ও সংসার-বিরাগী আছে, আর তারা অহংকারও করে না।
 
 
যে সমাজকে ইসলাম ধর্মগ্রন্থ এত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে আসছে ও এত প্রশংসা করে আসছে, সেই সমাজ কি এতই অসৎ ও অসাধু যে, সব জেনে শুনেও তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তন বা বিকৃত করবে? তাছাড়া যেখানে প্রকাশিত বাক্য ২২ : ১৮-১৯ এ রয়েছে তাদের জন্য কঠোর সাবধান বাণী।
 

 

২. কখন ?

 
এখন বড় প্রশ্ন হলো এই পরিবর্তন কখন করা হয়েছে? এর উত্তর খুবই সহজ। হয়ত বলতে হবে ইসলাম ধর্মের পরে অথবা তার আগে এর বাইরে তৃতীয় কোন উত্তর নেই।
যদি আমরা মনে করি যে, এটি ইসলামের পূর্বে পরিবর্তন করা হয়েছে, তাহলে কি কোরআন এই গ্রন্থ সম্পর্কে কি এই কথা বলতো -
৪২ নং সুরা শূরা ১৫ - ...এবং বল, আল্লাহ্‌ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস করি।
 
 
–৫নং সুরা মায়িদা ৪৪ ও ৪৬ - সঠিক পথের বিবরণ ও আলো মওজুদ রয়েছে।
 
 ৩ নং সুরা ইমরান ১১৯ - তোমরা সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ...। শুধু না নয় তিনি এই বাইবেল এত ভালবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন যে, তিনি তাঁর উম্মতগণকে এই কথা বলেছিলেন - ৫নং সুরা মায়িদা ৬৮ - ....। অন্যদিকে ১০নং সুরা ইউনুস ৯৪ আয়াতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে - ........।
 
 
 
–           সুতরাং এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে, ইসলামের পূর্বে বাইবেল সঠিক ছিল
 
 
–           যদি ইসলামের পরে এবং এমনকি বর্তমানেও বহু ভাষায় যদিও বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু তৎকালীন কিতাবের মূল ভাষায় লেখা অনেক পান্ডুলিপি আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বিখ্যাত যাদুঘরগুলিতে পাওয়া যায়। আর অনুবাদ সেই পান্ডুলিপি থেকেই করা হচ্ছে। সুতরাং বর্তমানেও বাইবেল অপরিবর্তিত, কেননা সর্বশক্তিমান দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেছেন যে, সেই বীজ জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য। কিতাবে লেখা আছে, ১পিতর ১ : ২৪ - .....।
 
 

৩   কেন ?

 
কোন্ স্বার্থে খ্রীষ্টিয়ানেরা এটা পরিবর্তন করতে ইচ্ছে হলো? তারা কেন পরিবর্তন করতে চাইল, যার জন্য তাদেরকে দোষী করা হয়েছে?
 
 
যদি আগে করে থাকে তাহলে, তাহলে নবী সে সময় নির্দিষ্টভাবে দেখিয়ে দিতে পারতেন এবং বর্তমানেও ইসলামিক পন্ডিতগণ তা দেখিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু এমনটি হচ্ছে না। আর বর্তমানে যদি পরিবর্তন করার ইচ্ছে হতো তাহলে এখন যে দু’একটি পদ তারা ব্যবহার করছে তাও তো তারা মুছে দিতে পারতো যার জন্য এখনও অপবাদ শুনতে হচ্ছে।
 
 
৬নং সুরা আনআম ৮৯-৯০ - আগের কিতাব মুসলমানদেরকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে এবং নবীকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তা কেন খ্রীষ্টিয়ানেরা পরিবর্তন করতে যাবে? তার কি প্রয়োজন আছে?

 

 ৪   কোথায় ?

 
যদি আমরা তাদের দাবী মেনেই নিই যে, বাইবেল পরিবর্তিত হয়েছে, তাহলে যে বিষয়টি সামনে আসবে তাহলো- কোন কোন জায়গায় তা করা হয়েছে এবং কারা এতে জড়িত ছিল। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো আসলটি বা অপরিবর্তিতটি তাদের কাছে আছে কি না। আমাদের অধিকার আছে বলা যে, আসলটির সাথে মিলিয়ে পরিবর্তনটি যেন আমাদের তারা দেখিয়ে দেন। বাস্তব সত্য হলো সেরকম কোন তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই। তাই এই দাবীটি হলো অযৌক্তিক ও হাওয়া-ই হাদিস।

 

 ৫.   কি ?

 

যদি পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে কি পরিবর্তন করেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা যা বলে তাহলো- যোহন ১৪: ১৫-১৭। এখানে একজন সাহায্যকারী বা সহায় পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। তা চিরকাল থাকবে এবং তা হলো সত্যের রূহ। যা প্রেরিত ১: ৮ আয়াতে ফেরেস্তাগণ পুনঃ ব্যক্ত করেছেন এবং প্রেরিত ২ : ১-৪ পদে এর পূর্ণতা আমরা দেখতে পাই।
 
 
তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ এর জীবদ্দশায় এরকম কোন দাবী করেন নি যে, তিনিই সেই সহায় বা সাহায্যকারী হিসেবে ৫৮০ বছর পর তিনি এসেছেন।

 

৬ .   কেমন করে ?

 
প্রথম মন্ডলী থেকে আরম্ভ করে প্রায় সব মন্ডলীতে গ্রীক ও হিব্রু ভাষায় বাইবেল ব্যবহৃত হতো। তাছাড়া প্রায় ১৪০০শত ভাষারও বেশী ভাষায় এটি অনুবাদ করে বিতরণ করা হয়েছে। এটি পৃথিবীতে সবচেয়ে অধিক বিক্রিত বই বলে প্রমাণিত।
 
 
যদি কেউ এটি থেকে কোন কিছু পরিবর্তন করতে চায় তাহলে পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় বিক্ষিপ্ত গ্রীক ও হিব্রু ভাষায় সব বাইবেল সংগ্রহ করতে হতো। এ জন্যে তাদের ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক লাইব্রেরী, পাঠাগার, মন্ডলী এবং সমস্ত ইহুদী ও খ্রীষ্টিয়ানদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রথমে আসল কপি সংগ্রহ করে পরিবর্তন করতে হতো।
 
 
যেমন- বৃটিশ, প্যালেষ্টাইন ও জার্মানী - ইত্যাদি যাদুঘরে বর্তমানে প্রায় ৫০০০হাজারেরও বেশী পান্ডুলিপি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে কোরআন নাযিল হবারও ৮০০শত বছর পূর্বে।
 
 
 
অভিযোগকারীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে কোরআনের এই উদ্ধৃত অংশটি অস্বীকার করবে - ৬নং সুরা আনআম ১১৫-১১৬ - কেউ পরিবর্তন করতে পারে না তাঁর কথা; তিনি সব শুনেন, সব জানেন। যারা তা করে শুধু অনুমান নির্ভর।
১০নং সুরা ইউনুস ৬৪ - কোন পরিবর্তন নাই তাঁর বাণীতে। ১৭নং সুরা কাহ্ফ ২৭
 
 
 

তাহলে কেমন করে ঈশ্বর তাঁর কথা পরিবর্তন করতে দিলেন এই জগতের মানুষকে?

 
–           তবে আমরা বলতে পারি যে, ইহুদী বা খ্রীষ্টিয়ানেরা কিতাব সঠিকভাবে মেনে চলতো না। সেই বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ৬২নং সুরা জুমু’আ ৫ –
 
–           তাই সমস্ত কিতাবের উপর ঈমান আনতে বলা হয়েছে, তা না হলে তারা পথভ্রষ্ট - ৪নং সুরা নিসা ১৩৬ এবং কলেমায়ে মোজাম্মেল (৫ কলেমার একটি)
 
–           ১৬ নং সুরা নাহ্ল ৪৩ - আগেকার কিতাবীদের কাছে জানতে যেতে বলা হয়েছে (ফুট নোট)।
 
–           আগের কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষক (প্রহরী) হলো নবী ৫ নং সুরা ৪৮ আয়াত।
 
–           ২নং সুরা বাকারা ১-৫ পরিবর্তিত কিতাব কি খোদা মুসলমানদেরকে বিশ্বাস ও অনুসরণ করতে বলতো?
 
 
 

 

আগের কিতাব বাতিল :

 
 
জগতের আইন-কানুন আর ঈশ্বরের আইন-কানুন কি একই? জগতের আইন-কানুনও শাসকের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় না। অনেক সময় কিছু বাতিল বা কিছু সংযোজন করা হয়। কিন্তু দেখবেন মূল আইন কখনও বাতিল হয় না। তাই জগতের কিছু স্বার্থন্বেষী লোক জগতের নিয়মের সাথে ঈশ্বরের নিয়ম এক করে তুলনা করতে চায়। এটি কি মেনে নেয়া যায়?
 
 

জগতের জায়গা কেনা-বেচা নিয়ে তুলনা -

 
নবীগনের সাথে জগতের শাসকদের তুলনা করা যায় না।
 
যীশু বলেছেন, মথি ৫ : ১৭, ১৮ - বাতিল করতে নয় বরং পূর্ণতা দান করতে এসেছেন। ২ তীমথিয় ৩ : ১৬ - এখানে কোন পার্থক্য করা হয় নি। খোদার কালামকে সমান মর্যাদা দান করা হয়েছে।
কোরআন আসমানি কিতাব 
 
 
কোরআন শব্দের অর্থ :
 
 
  •         ইমাম রাগেব ইস্ফাহানী (রহঃ) এর মতে, ‘অধ্যয়ন’ করা ও ‘পাঠ করা’ । অথবা একত্র করা বা সন্নিবেশিত করা। কোন বিষয় অধ্যয়ন ও পাঠ করার জন্যে প্রচুর অক্ষর এবং শব্দসম্ভার একত্র করতে হয় তার ভিত্তিতেই এই নামকরণ। -উলমুল কোরআন, পৃষ্ঠা ২৪,

  •        আল্লামা যারকানী (রহঃ) এর মতে, কোরআন শব্দের অর্থ ‘পঠিত গ্রন্থ’। -মানাহিলুল ইরফান, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৪
 
কোরআনের অন্য নাম :
 
  •          আল্লামা আবুল মা’আলী (রহঃ) তার গ্রন্থ ‘আল-বুরহানে’ কোরআনের মোট ৫৫টি নাম উল্লেখ করেছেন। -আল-ইত্কান, ১ম খ-, ৫০ পৃষ্ঠা

  •          অনেকে এর সংখ্যা ৯০ এর বেশী বলে দাবী করেছেন। -মানাহিলুল-ইরফান, ১ম খ-, ১৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য

  •          সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত নাম ‘আল-কোরআন’। মোট ৬১বার কোরআনে এই নাম উল্লেখ করা হয়েছে। -হাওয়ালায় উলূমূল -কোরআন, পৃষ্ঠা ২৪

  •          অন্যতম আরেকটি নাম হলো ‘আল-ফুরকান’। আল্লামা যরকানী (রহঃ) এই নাম দুটিকে সকল নামের মধ্যে প্রসিদ্ধতম বলে অভিহিত করেছেন। -মানাহিলুলু-ইরফান, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৫

  •          কোরআনের ‘আল-ফুরকান’ নামের অর্থ হচ্ছে - পার্থক্য ও প্রভেদ সৃষ্টি করা (হালাল, হারাম, হক, বাতিল)। -মানাহিলুল ইরফান, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৪
 
 
কোরআন নাযিল হতো ‘ওহী’ এর মাধ্যমে। তাই ‘ওহী’ শব্দের অর্থ জানা প্রয়োজন।
 
 
 
‘ওহী’ শব্দের আভিধানিক অর্থ :
 
  •          ওহী শব্দের অর্থ হলো - ইশারা করা, লিখে পাঠানো, পয়গাম প্রেরণ করা, কোন কথা সহ লোক পাঠানো, গোপন করা কাহারো    অন্তরে কোন কথা ঢেলে দেয়া বুঝিয়ে দেয়া। -উমদাতুল-কারী, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৪

  •          প্রখ্যাত অভিধান বিশারদ আল্লামা আবু ইসহাক (রহঃ) বলেন, সকল অভিধানেই ‘ওহী’র আসল অর্থ কাউকে গোপনে কিছু জানিয়ে দেওয়া। - ওহীয়ে ইলাহী, ২৪ পৃষ্ঠা

  •           আল্লামা যুবাইদী’র মতে, ‘ওহী’ শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো- দ্রুতগতিতে কোন ইশারা-ইঙ্গিত করা। এই ইশারা-ইঙ্গিত কথার দ্বারা বা কোন সংকেত অথবা কোন কটাক্ষের চিহ্নের মাধ্যমেও সম্পন্ন হতে পারে, আবার এমন আওয়াজের দ্বারাও তা হতে পারে যার কোন সঠিক রূপ নাই, এবং কোন অঙ্গভঙ্গী অথবা লিখনী ও নক্শা অংকনের মাধ্যমেও তা সম্পন্ন হতে পারে। -আল-মুফরাদাত লিগারীবিল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৩৬ দ্রষ্টব্য।
 
ওহীর সংজ্ঞা :
 
‘আল্লাহর পবিত্র বাণী যা কোন নবীর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়’। -উমদাতুল-ক্বারী, ১ম খ-, ১৮ পৃষ্ঠা
 
এ বিষয়ে কোরআন সাক্ষ্য দেয় যে, বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ‘ওহী’ প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের মা’বুদ একমাত্র সত্তা। ১৮নং সুরা কাহফ ১১০ আয়াত।
 
এই ওহী তিন প্রকার : (উলুমুল কোরআন - ফয়যুল বারী, ১ম খ-, ১৪-১৮ পৃষ্ঠা) কোরআন ৪২নং সুরা শূরা ৫১ আয়াত
 
  • ক) ওহী ক্বালবী : যা আল্লাহ সরাসরি নবীর মানসপটে কোন কথা বা বিষয় নিক্ষেপ করেন (অন্তর্লোকে কথা নিক্ষেপ করা)। (যেমন ইব্রাহিম এর প্রতি তাঁর পুত্রকে কোরবাণী করার হুকুম)

  • খ) ওহী কালামে ইলাহী : আল্লাহ সাথে সরাসরি নবীর কথোপকথন (পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলা)। যেমন হযরত মুসার সাথে বলতেন (৪নং সুরা নিসা ১৬৬ আয়াত)

  • গ) ওহী মালাকী : ফেরেশতার মাধ্যমে আল্লাহর বানী পৌঁছে দেয়া। ফেরেশতা কখনও মানুষ বেশে, সশব্দ করে, নিজের আসল আকৃতিতে। অর্থাৎ ফেরেশতা প্রেরণ দ্বারা।
 
 
ওহীর উদ্দেশ্য দু’টি :
 
১.         ওহী মাতলূ : কোরআনের আয়াতসমুহ। এর ভাষা (শব্দ) এবং ভাব উভয়ই আল্লাহর প্রত্যক্ষ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন। এটি শুধু পঠিতব্য ওহী। এখানে প্রধানতঃ ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস ও ইসলামী বিধি-বিধানের মূলনীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে।
 
 
২.         ওহী গায়ের মাতলু : এই ওহীরও উৎস একই। তবে তা পঠিত বা তেলাওয়াত করা হয় না। প্রথম ওহীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক মাসআলা প্রদান করা হয়েছে। যাকে হাদীসও বলা হয়।
 
 
 
ওহী নাযিল হওয়ার পদ্বতি :
 
 
১.         ঘন্টা-ধ্বনি পদ্বতি : হযরত আয়শা (রাযিঃ) এর মতে, এই সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ফুলে উঠতো, চেহারা বিবর্ণ হয়ে শুকনো খেজুর শাখার মত ধুসর মতে হতো, একদিকে ঠাণ্ডায় কম্পিত লোকের মত সামনের দাঁতে ঠোকাঠোকি শুরু হতো, অপর দিকে শরীর এতো ঘার্মাক্ত হতো যে, মুক্তার মত স্বেদবিন্দু ঝরতে থাকতো। -আল ইতক্বান, ১ম খ-, ৪৬ পৃষ্ঠা
 
 
            ওহীর এই পদ্বতি অনেক সময় এত বেশী গুরুভার হতো যে, কোন জানোয়ারের উপর দিলে , সে সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে  মাটিতে শুয়ে পড়তো। - যাদুল-মা’আদ, ১ম খ-, ১৮ পৃষ্ঠা
 
২.         ফেরেশতার মানব আকৃতি নিয়ে আগমন : কোন অপরিচিত মানুষের বেশে আসতো। তবে বেশীর ভাগ সাহাবী হযরত দিহ্য়া কালবী (রাযিঃ) এর আকৃতিতে আসতো। কারণ তিনি খুবই সুশ্রী ও সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট ছিলেন। -উমদাতুল-ক্বারী, ১ম খ-, ৪৭ পৃষ্ঠা । সেই ফেরেশতা হলো জিবরাঈল (-মিশকাত শরীফ, ১১ পৃষ্ঠা)
 
 
৩.         ফেরেশতার স্ব-আকৃতি নিয়ে আগমন : স্ব-আকৃতিতে সর্বমোট মাত্র তিনবার নবীর সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তৃতীয়বারের দেখা সম্পর্কিত বর্ণনা সনদের দিক দিয়ে দুর্বল ও সন্দেহযুক্ত। -ফতহুল-বারী, ১ম খ-, ১৮-১৯ পৃষ্ঠা।
 
 
৪.         সত্য স্বপ্ন : হযরত আয়শা (রাযিঃ) বলেন, হুযুরের প্রতি ওহী নাযিল আরম্ভ হয় সর্বপ্রথম নিদ্রাযোগে ভাল ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে। এ সময় তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তাই প্রভাত আলোকের মত বাস্তবে প্রতিফলিত হতো। -বুখারী শরীফ, ১ম খ-, ২ পৃষ্ঠা
 
 
৫.         আল্লাহর সাথে সরাসরি বাক্যালাপ : জাগ্রত অবস্থায় একবার মাত্র এরকম সম্মান পেয়েছিলেন তা মেরাজের রাতে। -আল-ইতকান, ১ম খ-, ৪৬ পৃষ্ঠা
 
 
৬.         মানস-পটে ফুঁকে দেওয়া : জিবরাঈল ফেরেশতা নবীকে দেখা না দিয়ে তাঁর অন্তরের মধ্যে কোন কথা ফুঁকে দিতেন। -ঐ-
 
 
 
কোরআন নাযিলের ইতিহাস
 
 
  •          ৮৫নং সুরা বুরুজ ২২ - কুরআন সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ (বেহেস্তে)।

  •          ৪৩ নং সুরা যুখরুফ ৪ - লাউহে মাহফূজে তা সুরক্ষিত ছিল

  •          দুনিয়ার নিকটতম স্থান ‘বাইতুল-ইজ্জতে’ পূর্ণ কোরআন নাযিল হয় (বাইতুল মামূর)

  •          অল্প অল্প করে ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী দুনিয়ায় দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত নাযিল হয়।

  •          কোরআন নাযিলের সূচনা হয় রমজান মাসে।

  •          সেই দিন ছিল বদর যুদ্ধের দিন (১১ বছর পর)। ৮নং সুরা আনফাল ৪১

  •          প্রথম বার আয়াত নাযিল হয় ৯৬নং সুরা আলাক ১-৩

  •          ৩ বছর পর দ্বিতীয়বার আয়াত নাযিল হয় ৭৪নং সুরা মুদাচ্ছির এর কয়েকটি আয়াত (গুরুভার)। এছাড়াও এপ্রসঙ্গে আরো তিনটি অভিমত পাওয়া যায়। -বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৩

  •          কোরআনের সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত হলো ২ নং সুরা বাকারা ২৮১, কারো মতে ২৭৫-২৮০ এবং কেউ কেউ মনে করেন ২৮২ আয়াত।
 
 
কোরআন সংরক্ষন
 
 
  •          আল্লাহ নিজেই এর সংরক্ষনকারী। ১৫নং সুরা হিজর ৯

  •          কোন রকম সংযোজন বা পরিবর্ধন কোরআনে প্রবেশ করতে পারবে না। ৪১ নং সুরা হা-মীম- সেজদা ৪২
 
 
নবীর যুগে কোরআন সংরক্ষণ :
 
 
  •          প্রধান ও মৌলিক উপায় স্মরণশক্তি। ৭৫ নং সুরা কিয়ামাহ ১৬-১৮ - আল্লাহ নিজেই পড়াতেন এবং মুখস্থ করার স্মরণশক্তি দিয়েছেন।

  •          সাহাবীদেরকে শুনাতেন এবং তাদেরকেও মুখস্থ করতে উৎসাহিত করতেন। হাজার হাজার সাহাবীগণ মুখস্থ করেছিলেন।
            * মাঊনা যুদ্ধে ৭০জন হাফেজ শহীদ হয়েছিলেন; * ইয়ামামা যুদ্ধেও ৭০ জন /কোন কোন মতে ৭০০জন হাফেজ শহীদ হন।
 
 
 
নবীর যুগে কুরআন লিখন :
 
 
  •          বিশেষ ৪০/৪২জন কে ওহী লেখক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। তারমধ্যে বিশেষ প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন ২১জন। তারা চামড়া, হাড়, গাছের পাতা, পাথর ইত্যাদির উপর লিপিবদ্ধ করতেন।

  •          মাঝে মাঝে জিবরাঈল দিক নিদের্শনা দিতেন কোন সুরার সাথে কোন আয়াতটি সংযুক্ত হবে। -তফসীরে খাযেন, ১ম খ-

  •          এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে লিখে বাড়ি নিয়ে যেতেন। অন্যদিকে হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন, কোরআন সংগে নিয়ে শক্রদেশে সফর করতে রসূল (সাঃ) নিষেধ করেছেন - বুখারী শরীফ, ১ম খ- ৪১৯ পৃষ্ঠা

  •          নবীর যুগে কোরআন সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ ছিল তবে একটি গ্রন্থ আকারে ছিল না (আল-কাত্তানী, ২য় খ-, ৩৮৪ পৃষ্ঠা

  •          হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) জীবনে মোট চার দফা কোরআন লিপিবদ্ধ করেছেন।
 
 
            - নবীর জীবদ্দশায়। এ সময় তিনি কোরআনের কেবল বৃহৎ সুরা গুলো লিখতেন
            - তার জানামতে সম্পূর্ণ কোরআন লিপিবদ্ধ করেন।
            - হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর খেলাফত যুগে। কোরআনের আসল তরতীব অনুযায়ী লিখেন (বর্তমান যেটি রয়েছে)
            - হযরত উসমান (রাযিঃ) এর খেলাফত যুগে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে কুরাইশী ভাষার উপর একত্র করার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর।
 
 
 
হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এর যুগ
 
 
  •          হযরত আবু বকর এর হুকুমে হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রাযিঃ) কোরআনের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সকল পান্ডুলিপি একত্রিত করে এক সূতায় গেঁথে দেন।

  •          কোরআন সংগ্রহের কারণ ছিল ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ শহীদ হওয়ায় হযরত ওমর (রাযিঃ) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন কোরআনের ভবিষ্যত নিয়ে এবং হযরত আবু বকর (রাযিঃ)-কে অনেক পীড়াপিড়ির পর একাজে রাজি করালেন।

  •          এই পান্ডুলিপিটি হযরত আবু বরক (রাযিঃ) এর কাছে সংরক্ষিত ছিল।

  •          হযরত আবু বকরের পর সেই পান্ডুলিপিটি হযরত উমর (রাযিঃ) এর তাঁর নিজের হেফাজতে নিয়ে নেন।

  •          হযরত উমর (রাযিঃ) এর পর ওছীয়ত অনুযায়ী নবীর বিবি হযরত হাফছার নিকট রক্ষিত রাখেন।

  •          হযরত হাফসার পর মারওয়ান ইবনে হাকাম তাঁর রাজত্বের সময় সেই পান্ডুলিপিটি পুড়িয়ে ফেলেন।
 
 
 
হযরত উসমান (রাযিঃ) এর যুগ
 
 
  •          এ সময় কুরআন একত্রীকরণ করা হয়।

  •          তিনি সংবাদ পেলেন যে, বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কোরআন পাঠ হচ্ছে এবং কোন কোন জায়গায় আলাদা আলাদা কোরআনের আয়াত পাঠ হচ্ছে। তিনি ৪ জন অভিজ্ঞ সাহাবীকে দায়িত্ব দিলেন যেন যেখানে যা পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করে শুধুমাত্র একটি পান্ডুলিপি তৈরী করে সব জায়গায় সকলকে সরবরাহ করতে। সেই সাহাবীগণ হলেন - হযরত যায়েদ বিন ছাবেত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হযরত আবদুর রহমান বিন হারেছ বিন হেশাম এবং হযরত সায়ীদ ইবনুল আ’ছ।

  •          পরবর্তীতে ঐ পান্ডুলিপি রেখে আরো বিক্ষিপ্তভাবে যা পাওয়া গেছে তার সব পুড়িয়ে ফেলা হয়।
 
 
কোরআনের আয়াতের সংখ্যা :
 
হযরত আয়েশা (রাযিঃ) এর গণনা অনুযায়ী                        -৬৬৬৬টি
হযরত উসমান (রাযিঃ) এর গণনা অনুযায়ী                        -৬২৫০টি
হযরত আলী (রাযিঃ) এর গণনা অনুযায়ী                           -৬২৩৬টি
হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) এর গণনা অনুযায়ী                 -৬২১৮টি
তবে সাধারণভাবে কোরআনের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টিই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
 
 
 
বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে আয়াতের সংখ্যা :
 
 
ওয়াদার আয়াত :                 ১০০০
ভীতি প্রদর্শক আয়াত :           ১০০০
নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আয়াত :     ১০০০
আদেশবাচক আয়াত :            ১০০০
উদাহরণ সম্বলিত আয়াত :       ১০০০
ঘটনাবলী সম্বলিত আয়াত :      ১০০০
হালাল সম্বলিত আয়াত :         ২৫০
হারাম সম্বলিত আয়াত :          ২৫০
তসবীহ সম্বলিত আয়াত :        ১০০
বিবিধ আয়াত :                   ৬৬
 


সর্বমোট আয়াত :              ৬৬৬৬