ইফিষীয় পত্র অধ্যয়ন / Study the book of Ephesians - পাষ্টর আবদুল মাবুদ চৌধুরী (Pastor Abdul Mabud Chowdhury)


ইফিষীয় পত্র অধ্যয়ন / Study the book of Ephesians
-   পাষ্টর আবদুল মাবুদ চৌধুরী (Pastor Abdul Mabud Chowdhury)

প্রেরিত পৌল রোমে গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়ে ইফিষীয় জামাতের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। সম্ভবত তিনি তা ৬২ খ্রীষ্টাব্দে লিখেন।
এই পুস্তকে প্রধান চরিত্র হলো: হযরত পৌল এবং তুখিক।
এই পুস্তকের প্রধান আয়াত হলো: ২:৮-৯; ৪:৪-৬; ৫:২২-২৮ এবং ৬:১১-১২ আয়াত।
প্রেরিত পৌল এই পত্রে বেশকিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন যা আমাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধি করবে। তিনি “ধনবান” ৫বার; “অনুগ্রহ” ১২বার; “প্রশংসা” ৮বার; “উত্তরাধিকার” ৪বার; “পূর্ণতা”, “পরিপূর্ণ” ৬বার এবং মূল শব্দ “মসীহেতে” ১৫বার উল্লেখ করেছেন।
আমাদের ধনবান হবার ভিত্তি:
হযরত ঈসা মসীহেতে আমাদের যে ধন তা আমরা নিজেরা অর্জন করতে পারবো না।তারপরও আমরা খোদার দয়ায় ও অনুগ্রহে ধনবান হয়েছি যা ইফিষীয়দের কাছে গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করেছেন।আমরা ধনবান কারণ এটিই খোদার ইচ্ছা (১:৫, ৯, ১১ আয়াত); অনুগ্রহে (১:৬-৭); প্রশংসার্থে (১:১২, ১৪); ক্ষমতায়/শক্তিতে (১:১৯); ভালবাসায় (২:৪), উত্তম ইচ্ছায় (১:৯); আপন উদ্দেশ্যে (১:১১; ৩:১১), আহ্বানে (১:১৮); উত্তরাধিকারসূত্রে (১:১৮); এবং তাঁর হাতের তৈরী (২:১০)। 
যদিও বা তিনি এই পত্রটি কেন লিখেছিলেন তা উল্লেখ করেন নি, কিন্তু পত্রটি পাঠে তাঁর লেখার উদ্দেশ্য পরিস্কার ভাবে বুঝা যায়। বিশেষতঃ ৪টি কারণে তিনি এই পত্রটি লিখে ছিলেন।
১. তিনি চেয়েছেন যেন ইফিষীয় জামাত বুঝতে পারে যে, আমাদের নাজাত তা অনন্তকালীন খোদার পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনা এমনভাবে করেছিলেন যাতে তাঁর অনুগ্রহের প্রতাপের প্রশংসা হয়।
২. তিনি তাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যে, যারা নাজাত পেয়েছে তারা অপরিমেয় রহমতের সাথে খোদার লোক এবং তিনি তাদের অশেষ রহমতের কিছু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যা তারা মসীহেতে নাজাত পাবার পর লাভ করেছেন।
৩. তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ইহুদী ও পরজাতির মধ্যে যে দেয়াল ছিল তা মসীহ সরিয়ে দিয়েছেন। তাই এখন মসীহেতে আমাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
৪. তিনি উৎসাহ দিতে চাইলেন যেন তারা তাদের আহ্বানের প্রত্যাশা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন। তিনি চাইলেন যারা নাজাত পেয়েছে তারা এক নুতন জীবনের মাধ্যমে জগতের মধ্যে জীবন যাপন করেন। একই ভাবে আমাদের জামাতে, জগতে এবং পরিবারে কেমন করে জীবন যাপন করবো সেই বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রথম বিষয়ঃ ধর্মতত্ত্ব
১.নাজাতের এক মহান পরিকল্পনার বর্ণনা দিয়েছেন (১:১৩-১৪ আয়াত)।
অনেক সময় আমরা নাজাত সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে থাকি :
যেমনঃ ক) কিভাবে আমরা ঈসার কাছে অনুতাপ ও বিশ্বাসে এসেছি।
     খ) কিভাবে আমাদের পাপের ক্ষমা পেয়েছি। এবং
     গ) আমরা খোদার প্রিয় সন্তান হয়ে তাঁর পরিবারের অর্ন্তভুক্ত হয়েছি।
কিন্তু হযরত পৌল ইফিষীয় জামাতের বিশ্বাসীদের বললেন, আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে যেন খোদার দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের নাজাত পাওয়াকে দেখি। হযরত পৌল শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের পরিত্রাণ আমাদের থেকে শুরু হয়নি কিন্তু তা শুরু হয়েছে খোদা যখন আমাদের নাজাতের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং আমাদেরকে মনোনিত করেছিলেন তখন থেকে। ১অধ্যায়ে বিষয়টিকে তিনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে:
     ১. পিতা খোদার মনোনিত ও নির্ধারিত (৩-৬ আয়াত)
     ২. খোদার পুত্রের মাধ্যমে ক্ষমা (৭-১২ আয়াত)
     ৩. পবিত্র আত্মা দ্বারা সিলমোহর করা হয়েছে (১৩-১৪ আয়াত)।
এর প্রতি ধাপ শেষ হয়েছে (৬, ১২ ও ১৪ আয়াত) এই বলে, “অনুগ্রহের প্রতাপের (মহিমা) প্রশংসার্থে” অথবা “তাঁর প্রতাপের প্রশংসা হয়” যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের নাজাতের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো খোদার প্রশংসার্থে এবং তাঁর অনুগ্রহে।

২.ইফিষীয় জামাতের বিশ্বাসীদের জন্য হযরত পৌলের প্রথম প্রার্থনা (১: ১৫-২৩ আয়াত)।
যদি আমরা এই প্রার্থনার বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝি তাহলে আমরা তিনটি কাজ করবো। তাহলো-
     ১. আমরা প্রার্থনা করার দিকে পরিচালিত হবো
২. আমরা প্রভুতে জীবন যাপন করার দিকে অনুপ্রাণিত হবো। এবং
৩. আমরা হারানোদের জয় করার জন্য উৎসাহিত হবো।
হযরত পৌল প্রথমে নাজাতের এক মহান আধ্যাত্মিক সত্য ১-১৪ আয়াতে লিখেছেন এবং তারপরই সাথে সাথে তিনি ইফিষীয় জামাতের জন্য প্রার্থনা শুরু করলেন। এটি এমন একটি আদর্শ প্রার্থনা যা সমস্ত ইমাম ও প্রচারকদের গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করা উচিত এবং তাদের নিজ নিজ জামাত বা চার্চের সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত।
হযরত পৌল জানেন যে, ঈসায়ীরা তখনই খোদার মহান আধ্যাত্মিক সত্যগুলো বুঝতে পারবে যখন যখন খোদার রূহ নিজে তাদেরকে তা ব্যাখ্যা করবেন বা বুঝিয়ে দিবেন। এটি এমনি এমনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হবে না কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে তা হয়ে থাকে। তাই তিনি তাঁর পাঠকদের জন্য প্রথম প্রার্থনা করলেন, যেন খোদা তাদেরকে প্রজ্ঞার ও প্রত্যাদেশের (প্রকাশ হবার) আত্মা বা রূহ দান করেন, যাতে তারা খোদাকে আরো ভালোভাবে জানতে পারে।
৩.ইফিষীয় ২ অধ্যায়ে হযরত পৌল বর্ণনা করেছেন, নাজাতের কাজ ছিলো অনুগ্রহশীল ও ভালবাসার খোদার কাজ। সুসমাচারের সৌন্দর্য এবং পূর্ণ ক্ষমতা যেন তারা দেখতে পায় তাই হযরত পৌল ইফিষীয় জামাতের বিশ্বাসীদের নিজেদের বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে তা দেখালেন। ইফিষীয় শহর ছিল মূতিপূজায় ও পাপে পূর্ণ কারণ সেখানের লোকেরা  মন্দতায় ও পাপে মৃত ছিল। তাদের নাজাত পাবার কোন রকম উপায় ছিল না।কারণ তারা আধ্যাত্মিকভাবে মৃত ছিল। কিন্তু যখন হযরত পৌল এই শহরে সুসমাচার প্রচার করতে এসেছিলেন, তখন খোদার ক্ষমতা ইফিষীয় লোকদের উপর নেমে এসেছিল। এর দ্বারা তারা জীবিত হয়ে উঠলো এবং মসীহ ঈসার পক্ষে ভাল কাজের মধ্যে নিজেদেরকে আবিস্কার করলো। তাই ইফিষীয় লোকেরা ভাল করে জানে তারা একমাত্র খোদার ক্ষমতা, দয়া ও অনুগ্রহে নাজাত পেয়েছিল। যথন তারা নাজাত পেলো তখন তারা বুঝলো যে, তারা খোদার সাথে সম্মিলিত হয়েছে এবং খোদার রাজ্যে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে, যেখানে আর কোন জাতি, ধর্ম , গোলাম, স্বাধীন এর কোন বৈষম্য নেই। কারণ এসকল বৈষম্য মসীহ তাঁর সুসমাচারের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন।
৪.হযরত পৌল ছিলেন খোদার সত্যের নিগূঢ়তত্ত্ব এর প্রচারক (৩:১-১৩)। হযরত পৌল ইফিষীয়দের কাছে ব্যাখ্যা দিলেন যে, তিনি যে পরিচর্যা কাজ করছেন তা মসীহ তাঁকে দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে যেন তিনি খোদার সত্যের নিগূঢ়তত্ত্ব পরজাতির কাছে প্রচার করেন এবং ইস্রায়েলের সাথে পরজাতিরাও যেন একসাথে একদেহের সদস্য হতে পারে (৬ আয়াত)।
৫.ইফিষীয়দের জন্য হযরত পৌলের দ্বিতীয় প্রার্থনা (৩:১৪-২১ আয়াত)।নাজাতের পরিকল্পনায় খোদার আশ্চর্য প্রজ্ঞার বিষয়ে তিনি তাঁর পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিলেন। তিনি এই পত্রের পাঠকদের জন্য প্রার্থনা করলেন যেন তারা বিশ্বাস শক্তিশালী হয়, বিশ্বাসের মাধ্যমে মসীহ যেন তাদের হৃদযে বাস করেন এবং তারা যেন খোদার ভালবাসা ধরে রাখতে বা বুঝতে পারেন। 
দ্বিতীয় বিষয় : বাস্তব জীবন
ইফিষীয়দের কাছে নাজাতের জন্য খোদার মহান পরিকল্পনার কথা ব্যাখা করে, এখন তিনি তাদেরকে কিছু বাস্তব জীবনে কিভাবে তাদের আহবানের উপযুক্ত ভাবে অর্থবহ জীবন যাপন করবেন সেই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এই অংশকে ৪টি ভাগে আমরা দেখতে পাই। যেমন:
     ১. স্থানীয় জামাতের মধ্যে ঈসায়ী জীবন যাপন করা (৪:১-১৬ আয়াত)।
     ২. জগতের মধ্যে ঈসায়ী জীবন যাপন করা (৪:১৭-৫:২১ আয়াত)
     ৩. ঘরের মধ্যে ঈসায়ী জীবন যাপন করা (৫:২২-৬:৯ আয়াত)
     ৪. খোদা প্রদত্ত পরিপূর্ণ যুদ্ধসজ্জা পরিধান করা (৬:১০-২০আয়াত)।

উপসংহার:
ইফিষীয়দের কাছে লেখা পত্রটি কিতাবের মধ্যে একটি অন্যতম পত্র যেখান থেকে উৎসাহ, দিক-নির্দেশbbনা এবং অনুপ্রেরণা লাভ করা যায়। এখানে নাজাতের জন্য যে খোদার মহান পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে যার মধ্য দিয়ে আমরা বেহেস্তে যেতে পারবো। এখানে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, এই জগতে আমরা কিভাবে খোদার পক্ষে জীবন যাপন করবো। যখন আমরা মানুষ কেন্দ্রিক নাজাতের বিষয় ভাবছি, তখন তিনি তা এই পত্রে সংশোধন করে দিয়েছেন। যেখানে বিশ্বাসীরা জাতি-গোষ্ঠি ও ভাষা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করছে, তখন তিনি ঐক্যের কথা বলেছেন। এই জগতে প্রতিদিন পবিত্রভাবে জীবন যাপনে নানান সন্দেহ ও প্রশ্নের সম্মুখিন, তখন তিনি আমাদেরকে আলো ও আশার কথা বলেছেন।
জামাতের ইমামেরা যদি মনোযোগ সহকারে এই পত্রটি পাঠ করেন তাহলে তারা নিজের জীবনে প্রত্যাশিত উপকৃত হবেন এবং যখন এখান থেকে প্রচার বা শিক্ষা দিবেন তখন জামাতের লোকেদেরকে তিনি খোদার কালামের উত্তম খাবার পরিবেশন করছেন।